পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬৯
এজিদ বধ পর্ব্ব—দ্বিতীয় প্রবাহ

পারিলাম না (আনন্দধ্বনি)। অনেক শুনিলাম, এ জীবনে অনেক দেখিলাম। আশ্চর্য্য ঈশ্বর-লীলা। ঈশ্বরভক্ত—ঈশ্বর-প্রেমিকদিগের সাংসারিক কার্য্য কখনই সর্ব্বাঙ্গীন সুন্দর হয় না। তাঁহারা আজীবন কষ্ট, ক্লেশ, যন্ত্রণা ভোগ করিয়া গিয়াছেন,—পরিবারগণকেও যে কি সুখস্বচ্ছন্দে রাখিতে পারিয়াছেন, তাহাও দেখিলাম! অনেক অজ্ঞ লোক এই সকল ঘটনায় প্রকাশ্যে কিছুই বলিতে না পারিলেও মনে মনে অবশ্যই বলিয়া থাকে যে, ভক্ত প্রেমিকের দশাই এইরূপ।”

 “পয়গম্বরগণ যে ঈশ্বরের এত ভালবাসার পাত্র, এত প্রিয়—প্রিয়জন, তাঁহারাও সময় সময় মহাকষ্টে পতিত হইয়া মহাদুঃখ ভোগ করিয়াছেন। প্রিয় বন্ধুগণ! সম্ভ্রান্ত সভ্যগণ! আপনারা অবগত আছেন, হজরত নূহকে তুফানে, ইব্রাহিমকে আগুনে মানবচক্ষে কতই না কষ্ট পাইতে হইয়াছে! —আর দেখুন। হজরত সোলেমান রাজা ও পয়গম্বর।—রাজা কেমন? —সব প্রাণীর উপর তাঁহার রাজত্ব, সর্ব্বজীবের উপর তাঁহার আধিপত্য ও অধিকার। পয়গম্বর কেমন—পরিবার-পরিজন ও সৈন্যসামন্ত-সহ তাঁহার সুসজ্জিত সিংহাসন এই জগদ্ব্যাপী বায়ু মাথায় করিয়া শূন্যে শূন্যে বহিয়া লইয়া যাইত। তাঁহার সামান্য ইঙ্গিতে দেব, দৈত্য, দানব, জ্বেন, পরী সাগরে —জঙ্গলে,—পর্ব্বতে কোথায় কে লুকাইত, তাহার আর সহজে সন্ধান পাওয়া যাইত না। এমন যে দেব-দৈত্য-দানব-দলনকারী নরকিন্নর পুজিত ভূপতি ও পয়গম্বর, তাঁহাকেও মহাবিপদে পতিত হইতে হইয়াছে। তাঁহার হস্তস্থিত মহাগৌরবান্বিত ও শক্তিশালী অঙ্গুরী হারাইয়া চল্লিশ দিবস তিনি কি কষ্টই না ভোগ করিয়াছিলেন। বিধির বিধানে, এক ধীবরের নিকট মজুরী-স্বরূপ দৈনিক দুইটি মৎস্য প্রাপ্ত হইবেন—এই নিয়মে চাকুরী স্বীকার করিয়া তাঁহাকে উদরাম্নের সংস্থান করিতে হইয়াছিল।—চাকুরী বাঁচাইতে মৎস্যের বোঝা মাথায় করিয়া বাজারে বিক্রয় করিতে হইয়াছিল।—বাধ্য হইয়া দায়ে পড়িয়া ধীবর-কন্যাকে বিবাহ করিতে পশ্চাৎপদ হইতে, কি অসম্মতি প্রকাশ করিতে তাঁহার সাধ্য হয় নাই—পারেন নাই। এত বড় মহাবীর হজরত মোহাম্মদের পিতৃব্য আমীর হাম্‌জা—কোরেশ-বংশে কেন, সমগ্র আরব দেশে যাঁহার