পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৪৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৭৬

করিবার উপায়-পথ আবিষ্কার। আবদুল জব্বারের হা-হুতাশ—পরিতাপ সার!—রাজপুরী হইতে গুপ্তভাবে বহির্গত হইয়া জনতার মধ্যে তার আত্মগোপন! সংসারে—তার ঘৃণা, পরিণামে ফকিরী গ্রহণ!—সকলই সেই ইচ্ছাময়ের ইচ্ছা! আমার অদৃষ্টে যাহা লেখা ছিল, তাহাই হইয়া গেল। বিধবা হইলাম। পূর্ণ বয়সে স্বামী-সুখে বঞ্চিত হইলাম। আর কোথায়? কোথায় যাইব? পিত্রালয়ে আসিলাম।”

 “পাপাত্মা এজিদ মনোসাধ পূর্ণ করিবার আশা-পথ পরিষ্কার করিয়া অগ্রপশ্চাৎ না ভাবিয়া তাহার নিজ ভাব ও গতি অনুসারে কাসেদ পাঠাইবার স্থির সিদ্ধান্ত করিয়াছিল। সে মনে মনে ভাবিয়াছিল: স্ত্রীলোক যাহা চায়— তাহাই আমার আছে, ধনরত্ন অলঙ্কারের ত অভাব নাই!—তাহার উপর দামেস্করাজ্যের পাটরাণী! প্রভু হাসানের প্রস্তাব শুনিয়া এজিদের ধনরত্ন, পদমর্য্যাদা, দামেস্কের সিংহাসন এই পায়ে দূরে নিক্ষেপ করিয়া মোস্‌লেমের শেষ প্রস্তাবেই স্বীকৃত হইলাম। পরিণয়-গ্রন্থি ছিন্ন হইবার পর আর সংসারে মন লিপ্ত হইল না।—পরকালের উদ্ধার-চিন্তাই বেশী হইয়াছিল। জগৎ কিছু নয়;—সকলই অসার। ধন, জন, স্বামী, পুত্র, মাতা, পিতা কেহ কাহারও নয়, যাহা কিছু সত্য-সম্পূর্ণ সত্য, তাহা সেই সৃষ্টিকর্ত্তা বিধাতা। পরকালে মুক্তি হইবে, সেই আশাতেই প্রভু হাসানের মুখ পানেই চাহিলাম। কিন্তু বড় কঠিন প্রশ্ন পড়িলাম। একদিকে জগতের অসীম সুখ, অন্য দিকে ধর্ম্ম ও পরকাল—অনেক চিন্তার পর দ্বিতীয় সঙ্কল্পের দিকেই মন টলিল। মহারাণী হইতে ইচ্ছা হইল না। সময় কাটিয়া গেল, বৈধব্যব্রত সাঙ্গ হইল। সময়ে প্রভু হাসানের দর্শনলাভ ঘটিল। ঈশ্বর-কৃপায় সে সুকোমল পদসেবা করিতে অধিকারিণী হইলাম। প্রভু ধর্ম্ম-শাস্ত্রমতে আমার পাণিগ্রহণ করিলেন। আবার সংসারী হইলাম। প্রভু হাসান অতি সমাদরে আমাকে মদিনায় লইয়া নিজ অন্তঃপুরে আশ্রয় দিলেন। নূতন সংসারে অনেক কিছুই নুতন দেখিলাম। পবিত্র অন্তঃপুরের পবিত্রতা, ধর্ম্মচর্চ্চা, ধর্ম্মমতের অনুষ্ঠান, ধর্ম্মক্রিয়া—অনেক কিছুই দেখিলাম, অনেক কিছুই শিখিলাম। মুক্তি ক্ষেত্রে আশালতার অঙ্কুরিত ভাব দেখিয়া মনে কথঞ্চিৎ শান্তিলাভ