পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৫০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৮৪

মোহাম্মদ হানিফা দামেস্ক নগরের প্রান্তসীমায় সসৈন্যে মহাবীর নরপতিগণ সহ আসিয়া এজিদের সঙ্গে যুদ্ধ আরম্ভ করিয়াছেন। তুমুল সংগ্রাম আরম্ভ হইয়াছে। আমাদের উদ্ধারের জন্য মোহাম্মদ হানিফা এবং তাহার অন্যান্য ভ্রাতাগণ প্রাণপণে যুদ্ধ করিতেছেন। এজিদও স্বয়ং যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত। কত কথাই না শুনিলাম,—শেষে শুনিলাম: ওমর আলীর প্রাণবধের সংবাদ। শূলদ ও এজিদ-শিবির সম্মুখে খাড়া হইয়াছে। কতলোক ওমর আলীর প্রাণবধ দেখিতে দৌড়িয়াছে। কারবালার যুদ্ধ-সংবাদও শিবিরে থাকিয়া শুনিয়াছিলাম, আর দামেস্ক-প্রান্তরের যুদ্ধসংবাদও এজিদের বন্দীখানায় থাকিয়া শুনিতেছি। কারবালায় যথাসর্বস্ব ইলাম। আর এখানে হারাইলাম-ইমাম বংশের একমাত্র ভরসা, জয়নাল আবেদীন। এ কি শুনি! “জয় জয়নাল আবেদীন?” এ কিরূপ ঘোষণা ঐ ত আবার শুনিতেছি, “জয়! নব-ভূপতির জয়!” সে কি কথা? আমি কি পাগল হইলাম। কি কথার পরিবর্তে কি কথা শুনিতেছি। ভেরী বাজাইয়া স্পষ্ট ভাবেই জয় ঘোষণা করিতেছে। ওই ত একেবারে বন্দীখানার বহিদ্বারে!” এই কথা বলিয়াই জয়নাব শাহূরেবানু ও হাসনেবানুর কক্ষে যাইতে অতি ব্যস্তভাবে উঠিলেন। জয়নাবের মনের কথা আর ব্যক্ত হইল না। উচ্চৈঃস্বরে জয়ধ্বনি করিতে করিতে সৈন্যগণ বন্দীখানার মধ্যে আসিয়া পড়িল। দীন মোহাম্মদী নিশান জয়ডঙ্কার তালে তালে দুলিয়া দুলিয়া উড়িতে লাগিল। নবীন মহারাজ আপন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনসহ বন্দী-গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলেন।

 পাঠক! এই অবসরে লেখকের একটি কথা শুনুন। সুখের কান্না পুরুষেও কাঁদে, স্ত্রীলোকেও কাঁদে। তবে পরিমাণে বেশী আর কম। জয়নাল আবেদীন বন্দী-গৃৎমধ্যে প্রবেশ করিলে তাহার মাতা, সহোদর প্রভৃতি প্রিয় পরিজন সুখের কান্নায় চক্ষের জল ফেলিলেন, কি হাসিমুখে হাসিতে হাসিতে প্রিয়দর্শন জয়নালকে ক্রোড়ে করিয়া মুখচুম্বন করিলেন, তাহা নির্ণয় করা সহজ নহে দামেস্ক কারাগার সৈন্যসামন্ত পরিবেষ্টিত হইলেও প্রত্যক্ষ দেখাইতে যে না পারি, তাহাও নহে।—কার সাধ্য রোধে