পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৫১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৯৩
এজিদ বধ পর্ব-পঞ্চম প্রবাহ

বিষাদ-সিন্ধু পার হইয়া সুখ-সিন্ধুর দুখতটে সকলে একত্রে উঠিব, বোধ হয়, তাহা ঘটিল না। শীঘ্র আসুন! বিলম্ব করিবেন না। আমি ভবিষ্যৎ বড়ই অমঙ্গল দেখিতেছি। আম্বাজাধিপতির মতিগতি ভাল বোধ হইতেছে না! শীঘ্র অশ্বে আরোহণ করুন। বড়ই কঠিন সময় উপস্থিত, দয়াময়ের লীলা বুঝিয়া উঠা মানুষের সাধ্য নয়!”

পঞ্চম প্রবাহ

 এখন আর সূর্য্য নাই—পশ্চিম গগনে মাত্র লোহিত আভা আছে। সন্ধ্যাদেবী সবেমাত্র একটু ঘোমটা খুলিয়াছেন। তারাদল দলে দলে দেখা দিতে দিতে অগ্রসর হইতেছেন; কেহ কেহ সন্ধা-সীমন্তিনীর সীমন্ত উপরিস্থ অম্বরে ঝুলিয়া জগৎ মোহিত করিতেছেন, কেহ বা সুদূরে থাকিয়া মিটিমিটিভাবে চাহিতেছেন—ঘৃণার সহিত চক্ষু বন্ধ করিতেছেন, আবার দেখিতেছেন। মানবদেহের সহিত তারাদলের কোন সম্বন্ধ নাই বলিয়া দেখিতে পাইতেছেন না; কিন্তু বহুদূরে থাকিয়াও চক্ষু বন্ধ করিতে হইতেছে—কে দেখিতে পারে? অন্যায় নরহত্যা, অবৈধ বধ, কোন্ চক্ষু দেখিতে পারে? আজিকার সূর্য্য উদয় না হইতেই হানিফার রোষের উদয়—তরবারি ধারণ। সে সূর্য্য অস্তমিত হইল। দামেস্ক-প্রান্তরের মরুভূমিতে রক্তের স্রোত বহিল, কিন্তু মোহাম্মদ হানিফার জিঘাংসা-বৃত্তি নিবৃত্ত হইল না। “এজিদ তোমার বধ্য নহে” এই দৈববাণীতে মোহাম্মদ হানিফার অন্তরে রোষ এবং ভয় একত্র এক সময়ে উদিত হইয়াছে। উদ্যান-মধ্যে ঊর্দ্ধমুখ হইয়া স্থির-নেত্রে ক্ষণকাল চিন্তার কারণও তাহাই। এক সময়ে দুইভাব, পরস্পর-বিপরীত ভাব—নিতান্তই অসম্ভব; কিন্তু হইয়াছে তাহাই—ভয় এবং রোষ। বীৱহৃদয় ভয়ে ভীত হইবার নহে। তরে যে কিঞ্চিৎ কাঁপিতেছিল, তাহা দৈববাণী বলিয়া—প্রভু হোসেনের জ্যোতির্ম্ময় পবিত্র ছায়া দেখিয়া। কিন্তু পরিশেষে নির্ভয় হৃদয়ে ভয়ের স্থান হইল না; সুতরাং রোষেরই জয়! প্রমাণ—অশ্বে আরোহণ, সজোরে কশাঘাত!