জ্ঞানবৃদ্ধ প্রবীণ প্রাচীন প্রধান কার্য্যকারকগণের ইচ্ছা নহে, সেই অঘটন কার্য্য ঘটাইতে গেলেই এইরূপ ফল ফলিয়া থাকে। এজিদের পতন, রাজ্য হইতে বিচ্যুতি এবং আত্মজীবন বিনাশ, ইহাতে আশ্চর্য্য কিছুই নাই! অবিবেচক, অপরিপক্ক-মস্তিষ্ক, উদ্ধত যুবকদিগের কার্য্যফল এইরূপই হইয়া থাকে।”
এইরূপ কহিয়া নব-ভূপতির মঙ্গল কামনা করিয়া নতশিরে অভিবাদন করিয়া মন্ত্রিপ্রবর হামান উপবেশন করিলেন, রাজকার্য্যের সমুদয় ভার তাঁহার প্রতি অর্পিত হইল। নবীন মহারাজ আত্মীয়-স্বজন-পরিবারসহ পবিত্র ভূমি মদিনায় যাইতে প্রস্তুত হইলেন। মদিনাবাসীরাও মহানন্দে নবীন মহারাজের সহিত মদিনা যাইতে উদ্যোগী হইলেন।
বিজয়ী বীরগণ সহ, সৈন্যসামন্ত সহ, আত্মীয়-স্বজন-পরিবার-পরিজনগণ সহ বিজয়-পতাকা উড়াইয়া বিজয়-ডঙ্কা বাজাইতে বাজাইতে নবীন ভূপতি দামেস্ক হইতে মদিনার পথে বহির্গত হইলেন। গাজী রহ মানের আদেশে এই শুভ-সংবাদ লইয়া বহুসংখ্যক দূত অশ্বপৃষ্ঠে মদিনাভিমুখে ছুটিলেন। দামেস্ক-বিজয়, এজিদের পরাজয়—পলায়ন, মোহাম্মদ হানিফার যুদ্ধ বিবরণ ইতিপূর্ব্বেই মদিনাবাসিগণ লোক পরম্পরায় শুনিয়া মহা-আনন্দিত হইয়া উৎসুক-চিত্তে রাজকীয় সংবাদ আশায় দিবারাত্র অপেক্ষা করিতেছিলেন। সময়ে দামেস্ক হইতে প্রেরিত কাসেদগণের মুখ হইতে এই শুভসংবাদ পাইয়া মদিনাবাসিগণ হজরত মোহাম্মদের রওজায় যাইয়া নবীন ভূপতি জয়নাল আবেদীনের মঙ্গল-কামনা প্রার্থনা করিলেন এবং নব-ভূপতিকে সাদরে গ্রহণের জন্য সমুচিত আয়োজনে মনোনিবেশ করিলেন।
দিনের পর দিন কাটিয়া গেল। নব-ভূপতির আগমনদর্শন—দর্শনাশা ক্রমশঃই বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। দ্বিতীয় দল কাসেদ একদিন উপনীত হইয়া ঘোষণা করিল,—“জয় জয়নাল আবেদীন! জয় এমাম বংশের শেষ রাজদণ্ডধর! আজ মদিনা-প্রান্তর পর্য্যন্ত,—ঐ প্রান্তরেই সসৈন্যে নিশাযাপন!—আগামী কল্য প্রত্যুষে নগরে প্রবেশ!—প্রথম হজমতের রওজা জেয়ারত, পরে অন্তঃপুরে প্রবেশ!”