পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৫২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৯৯
উপসংহার

জ্ঞানবৃদ্ধ প্রবীণ প্রাচীন প্রধান কার্য্যকারকগণের ইচ্ছা নহে, সেই অঘটন কার্য্য ঘটাইতে গেলেই এইরূপ ফল ফলিয়া থাকে। এজিদের পতন, রাজ্য হইতে বিচ্যুতি এবং আত্মজীবন বিনাশ, ইহাতে আশ্চর্য্য কিছুই নাই! অবিবেচক, অপরিপক্ক-মস্তিষ্ক, উদ্ধত যুবকদিগের কার্য্যফল এইরূপই হইয়া থাকে।”

 এইরূপ কহিয়া নব-ভূপতির মঙ্গল কামনা করিয়া নতশিরে অভিবাদন করিয়া মন্ত্রিপ্রবর হামান উপবেশন করিলেন, রাজকার্য্যের সমুদয় ভার তাঁহার প্রতি অর্পিত হইল। নবীন মহারাজ আত্মীয়-স্বজন-পরিবারসহ পবিত্র ভূমি মদিনায় যাইতে প্রস্তুত হইলেন। মদিনাবাসীরাও মহানন্দে নবীন মহারাজের সহিত মদিনা যাইতে উদ্যোগী হইলেন।

 বিজয়ী বীরগণ সহ, সৈন্যসামন্ত সহ, আত্মীয়-স্বজন-পরিবার-পরিজনগণ সহ বিজয়-পতাকা উড়াইয়া বিজয়-ডঙ্কা বাজাইতে বাজাইতে নবীন ভূপতি দামেস্ক হইতে মদিনার পথে বহির্গত হইলেন। গাজী রহ মানের আদেশে এই শুভ-সংবাদ লইয়া বহুসংখ্যক দূত অশ্বপৃষ্ঠে মদিনাভিমুখে ছুটিলেন। দামেস্ক-বিজয়, এজিদের পরাজয়—পলায়ন, মোহাম্মদ হানিফার যুদ্ধ বিবরণ ইতিপূর্ব্বেই মদিনাবাসিগণ লোক পরম্পরায় শুনিয়া মহা-আনন্দিত হইয়া উৎসুক-চিত্তে রাজকীয় সংবাদ আশায় দিবারাত্র অপেক্ষা করিতেছিলেন। সময়ে দামেস্ক হইতে প্রেরিত কাসেদগণের মুখ হইতে এই শুভসংবাদ পাইয়া মদিনাবাসিগণ হজরত মোহাম্মদের রওজায় যাইয়া নবীন ভূপতি জয়নাল আবেদীনের মঙ্গল-কামনা প্রার্থনা করিলেন এবং নব-ভূপতিকে সাদরে গ্রহণের জন্য সমুচিত আয়োজনে মনোনিবেশ করিলেন।

 দিনের পর দিন কাটিয়া গেল। নব-ভূপতির আগমনদর্শন—দর্শনাশা ক্রমশঃই বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। দ্বিতীয় দল কাসেদ একদিন উপনীত হইয়া ঘোষণা করিল,—“জয় জয়নাল আবেদীন! জয় এমাম বংশের শেষ রাজদণ্ডধর! আজ মদিনা-প্রান্তর পর্য্যন্ত,—ঐ প্রান্তরেই সসৈন্যে নিশাযাপন!—আগামী কল্য প্রত্যুষে নগরে প্রবেশ!—প্রথম হজমতের রওজা জেয়ারত, পরে অন্তঃপুরে প্রবেশ!”