সপ্তম প্রবাহ
সময় যাইতেছে। যাহা যাইতেছে, তাহা আর ফিরিয়া আসিতেছে না। আজ যে ঘটনা ঘটিল, কাল তাহা দুই দিন হইবে। ক্রমে দিনের পর দিন, সপ্তাহ, পক্ষ, মাস অতীত হইয়া দেখিতে দেখিতে কালচক্রের অধীনে বৎসরে পরিণত হইবে। বৎসর, বৎসর,—অনন্ত বৎসর। যে কোন ঘটনাই হউক, অবিশ্রান্ত গতিতে তাহা দূরে বিনিক্ষিপ্ত হইতেছে। জয়নাবের বৈধব্যব্রত সাঙ্গ হইল। হাসান স্বয়ং জয়নাবের ভবনে যাইয়া জয়নাবকে বিবাহ করিয়া আনিলেন। প্রথমা স্ত্রী হাসনেবানু, দ্বিতীয়া জাএদা, তৃতীয়া জয়নাব। হাসনেবানু প্রথমা স্ত্রী, তদ্গর্ভজাত একমাত্র পুত্র আবুল কাসেম। আবুল কাসেম পূর্ণবয়স্ক, সর্ব্বগুণে গুণান্বিত, এ পর্য্যন্ত পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয় নাই; পিতার অনুবর্ত্তী থাকিয়াই কালাতিপাত করিতেছেন। পুণ্যভূমি মদিনা অতি পবিত্র স্থান। লোকমাত্রেই ঈশ্বরভক্ত, পাপশূন্য-চরিত্র। কাসেম পবিত্র বংশে জন্মিয়াছেন; তাঁহার আপাদমস্তক পবিত্র। অস্ত্রবিদ্যাতেও তিনি বিশারদ। এই অমিততেজা মহাবীর কাসেমের কীর্ত্তি বিষাদ-সিন্ধুর একটি প্রবল-তরঙ্গ। পাঠকগণকে পূর্ব্বেই তাহার কিঞ্চিৎ পরিচয় দিয়া রাখিলাম। জাএদার সন্তানসন্ততি কিছুই নাই। এক ব্যক্তির দুই প্রার্থী হইলেই মহা গোলমাল উপস্থিত হয়। সপত্নীবাদ কোথায় না আছে? হাসনেবানু হাসানের প্রধানা স্ত্রী, সকলের মাননীয়া। তৎপ্রতি জাএদার আন্তরিক বিদ্বেষভাব থাকিলেও তিনি তাহা কার্য্যে পরিণত করিতে পারিতেন না। কিন্তু জয়নাবের সহিত তাঁহার সমভাব চলিতে লাগিল। জাএদা ভাবিয়াছিলেন, হাসান তাঁহাতেই অনুরক্ত; পূর্ব্বে যাহা হইবার হইয়াছে, কিন্তু জাএদা বাঁচিয়া থাকিতে তিনি পুনরায় দারপরিগ্রহ করিবেন না। এক্ষণে দেখিলেন, তাঁহার সে বিশ্বাস ভ্রমসঙ্কুল। এখন নিশ্চয়ই বুঝিলেন, হাসানের ভালবাসা আন্তরিক নহে; —আন্তরিক হইলে এরূপ ঘটিত না, এক মনও ভিন্ন ভিন্ন তিন ভাগে বিভক্ত করিতে পারিতেন না। ক্রমেই তিনি পূর্ব্ব ভাবের অনেক পরিবর্ত্তন দেখিলেন। হাসানের কথায়,