আবার মৃদু-মৃদু স্বরে বলিতে লাগিলেন, এ রাজ্যে মঙ্গলের আর সম্ভাবনা নাই। নিশ্চয়ই বোধ হইতেছে, কাসেদ কোন বিপদে পড়িয়াছে। তাঁহারা মদিনায় না থাকিলে, অবশ্যই কাসেদ ফিরিয়া আসিত। যাহাই হউক, আমার চিরবিশ্বাসী বহুদর্শী মোস্লেমকেই পুনরায় মদিনায় পাঠাও। আর হাসান-হোসেনের নিকট আমার পক্ষ হইতে একখানি প্রার্থনাপত্র লিখিয়া মোস্লেমের সঙ্গে দাও। তাহাতে লিখিয়া দাও আমার বাঁচিবার আশা নাই। পাপময় জগৎ পরিত্যাগের পূর্ব্বে আপনাদের উভয় ভ্রাতাকে একবার স্বচক্ষে দেখিতে ইচ্ছা করি। আরও একটি কথা আমি স্থির-সঙ্কল্পে মনস্থ করিয়াছি। আপনাদের এই পৈতৃক দামেস্ক রাজ্য আপনাদিগকে প্রত্যর্পণ করিব, আমার আর রাখিবার সাধ নাই। এ কথাও লিখিও আপনাদিগকে এই সিংহাসনে বসিতে দেখিলেই আমার জীবন সার্থক হইবে। হামান্! মোস্লেমকে বিশেষ সাবধানে মদিনায় পাঠাইও। নানা প্রকারের সন্দেহ আমার মনে উপস্থিত ও উদয় হইয়াছে; (এজিদ এই মাত্র শুনিয়া হামানের অদৃশ্যে তথা হইতে অতি ত্রস্তে প্রস্থান করিলেন।) এত গোপনে মোস্লেমকে পাঠাইবে যে, তাহার সন্ধান যেন আর একটি প্রাণীও না জানিতে পারে।” হামান বিদায় হইলেন, এবং রাজাদেশ প্রতিপালন করিয়া তখনি মোস্লেমকে মদিনায় পাঠাইলেন।
এমামভক্ত মোস্লেম উর্দ্ধশ্বাসে মদিনাভিমুখে চলিলেন। মোস্লেম পাঠকগণের অপরিচিত নহেন। ক্রমে রাজধানী ছাড়িয়া তিনি একটি প্রশস্ত বালুকাময় প্রান্তরমধ্য দিয়া যাইতেছেন। বালুকাময় ভূমি রৌদ্রের উত্তাপে অগ্নিময় হইয়া মোস্লেমের গমনে বিশেষ বাধা দিতেছে। কি করেন? শীঘ্র যাইতে হইবে, কোন দিকে লক্ষ্য নাই, অবিশ্রান্তভাবে চলিতেছেন। অনেক স্থলেই ভূমি সমতল নহে, স্থানে স্থানে প্রস্তরকণার ন্যায় স্তূপাকার বালুকারাশি প্রস্তরে পরিণত হইবে বলিয়া ভূমি হইতে শিরোত্তোলন করিয়া রহিয়াছে। মোস্লেম দেখিলেন: তাঁহার দক্ষিণ পার্শ্বস্থ স্তূপাকারের আড়াল হইতে চারিজন অস্ত্রধারী পুরুষ বেগে আসিয়া তাঁহাকে ঘিরিয়া দাঁড়াইল। ঐ আক্রমণকারীদিগের মুখ বস্ত্র দ্বারা এরূপে আবৃত যে, তাহাদের স্বরূপ এবং আকৃতি কিছুই দেখা যাইতেছিল না। মোস্লেম জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন, “তোমরা কে?