দিয়াই এজিদ চলিয়া গেলেন। কিন্তু কেহই এজিদের চক্ষে জল দেখিতে পাইল না। এজিদ পিতার মৃতদেহ যথারীতি স্নান করাইয়া “কাফন”[১] দ্বারা শাস্ত্রানুসারে আপাদমস্তক আবৃত করিয়া মৃতদেহের সদ্গতি উপাসনা (জানাজা) করাইতে তাবুতশায়ী[২] করাইয়া সাধারণের সম্মুখে আনয়ন করিলেন। বিনা আহ্বানে শত শত ধার্ম্মিক পুরুষ আসিয়া জানাজাক্ষেত্রে মাবিয়ার বস্ত্রাবৃত শবদেহের সমীপে ঈশ্বরের আরাধনার নিমিত্ত দণ্ডায়মান হইলেন। সকলেই করুণাময় ভগবানের উদ্দেশে দুই হস্ত তুলিয়া মাবিয়ার আত্মার মুক্তির জন্য প্রার্থনা করিলেন। পরে নির্দ্দিষ্ট স্থানে “দাফন” (মৃত্তিকাপ্রোথিত) করিয়া সকলেই স্ব স্ব গৃহে চলিয়া গেলেন।
মাবিয়ার জীবনের লীলাখেলা একেবারে শেষ হইল। ঘটনা এবং কার্য্য স্বপ্নবৎ কাহারও কাহারও মনে জাগিতে লাগিল। হাসান-হোসেন মদিনা হইতে দামেস্কের নিকট পর্য্যন্ত আসিয়াই মাবিয়ার মৃত্যুসংবাদ শ্রবণে আর নগরে প্রবেশ করিলেন না। মাবিয়ার জন্য অনেক দুঃখ প্রকাশ করিয়া পুনর্ব্বার মদিনায় যাত্রা করিলেন। মাবিয়া জগতের চক্ষু হইতে অদৃশ্য হইয়াছেন; রাজসিংহাসন পরিত্যাগ করিয়া যে স্থানে গিয়াছেন, তথা হইতে আর ফিরিবেন না, এজিদের মুখও আর দেখিবেন না, এজিদকে পাপ-কার্য্য হইতে বিরত এবং হাসান-হোসেনের প্রতি নিষ্ঠুরাচরণ নিবারণ করিতেও আর আসিবেন না, এজিদকে ভর্ৎসনাও আর করিবেন না—এজিদ মনে মনে এই স্থির সিদ্ধান্ত করিয়া দামেস্ক রাজসিংহাসনে উপবেশন করিলেন। রাজমুকুট তাঁহার শিরে শোভা পাইতে লাগিল। সত্যবাদী, নিরপেক্ষ ও ধার্ম্মিক মহাত্মাগণ, যাঁহারা হজরত মাবিয়ার স্বপক্ষে ছিলেন, তাঁহাদের হৃদয় কঁপিয়া উঠিল। আমরাও বিষাদ-সিন্ধুর তটে আসিলাম। এজিদ এক্ষণে স্বাধীন রাজ্যের রাজা। কখন কাহার ভাগ্যে কি হয়, ইহা ভাবিয়া সকলেই ব্যাকুল। রাজ-দরবার লোকে লোকারণ্য। পূর্ব্বদিন ঘোষণা করা হইয়াছে, যেন শহরের সম্ভ্রান্ত লোকমাত্রেই দরবারে উপস্থিত হন। অনেকের মনেই অনেক কথা উঠিল। কি করেন,