পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৪৮

করিত না। হাসানের অবস্থা সম্বন্ধে জয়নাবের অবিদিত কিছুই নাই। কেবল মিথ্যাবাদীর চক্রান্তে জয়নাব-রত্ন শত্রুহস্তে পতিত হইয়াছে। আরও কথা আছে—এই মিথ্যাবাদী যাহা বলে, তাহাই যদি সত্য বিবেচনা করিয়া লওয়া যায়, তাহা হইলে ইহার অপরাধ আরও গুরুতর হইয়া দাঁড়ায়। সে আমার চিরশত্রুর আজ্ঞা প্রতিপালন করিয়া আমারই সর্ব্বনাশ করিয়াছে। হাসানের পয়গাম জয়নাবের নিকট লইয়া যাইতে আমি ইহাকে নিয়োজিত করি নাই। ইহার অপরাধের শাস্তি হওয়া আবশ্যক। সে না জানিয়া এই কার্য্য করিয়াছে তাহাও বলিতে পারি না। জয়নাব-লাভের জন্য আমি যাহা করিয়াছি, তাহা কে না জানে? মোস্‌লেম কি জানে না যে, জয়নাবের জন্য আমি সর্ব্বস্ব পণ করিয়া শেষে জীবন পর্য্যন্ত বিসর্জ্জন দিতে প্রস্তুত ছিলাম? সেই জয়নাবের বিবাহে সে আমার পক্ষে উকীল নিযুক্ত হইয়া অপরের সঙ্গে বিবাহ স্থির করিয়া আসিল, ইহা অপেক্ষা বিশ্বাসঘাতকতা আর কি আছে? আরও একটি কথা—এই সকল কুকার্য্য করিয়াও এই ব্যক্তি ক্ষান্ত হয় নাই; আমারই সর্ব্বনাশের জন্য, আমাকেই রাজ্য হইতে বঞ্চিত করিবার নিমিত্ত, আমাকেই পথের ভিখারী করিবার আশায় মাবিয়ার পত্র লইয়া হাসানের নিকট মদিনায় যাইতেছিল। অতএব আমার এই আজ্ঞা যে, অবিলম্বেই মোস্‌লেমের শিরচ্ছেদন করা হউক।” সরোষে কাঁপিতে কাঁপিতে এজিদ পুনরায় বলিতে লাগিলেন, “সে দণ্ড বধ্যভূমিতে হইবে না, অন্য কোনও স্থানে হইবে না; এই সভাগৃহে— আমার সম্মুখেই আমার দণ্ডাজ্ঞা প্রতিপালিত হউক।”

 মারওয়ান বলিলেন, “রাজাজ্ঞা শিরোধার্য। কিন্তু প্রকাশ্য দরবারে দণ্ডবিধান রাজনীতির বিরুদ্ধ।”

 এজিদ বলিলেন, “আমার আজ্ঞা অলঙ্ঘনীয়। যে ইহার বিরোধী হইবে তাহারও ঐ শাস্তি। মারওয়ান সাবধান।”

 সকলের চক্ষু যেন অন্ধকারে আচ্ছন্ন হইল। এজিদের মুখের কথা মুখে থাকিতে থাকিতেই হতভাগ্য মোস্‌লেমের ছিন্নশির ভূতলে লুণ্ঠিত হইতে লাগিল। জিঞ্জিরাবদ্ধ দেহ শোণিতাক্ত হইয়া সভাস্থলে পড়িয়া সভ্যগণের মোহ ভঙ্গ করিল। তাঁহারা চাহিয়া দেখিলেন: মোস্‌লেম আর নাই। রক্তমাখা দেহ