ইঙ্গিতে তাহাকে লোভও দেখাইয়াছেন। কিন্তু কোথায় তাঁহার নিবাস, কোথায় অবস্থিতি, কিছুই তাহাকে বলেন নাই! অথচ বৃদ্ধার বাড়ী-ঘর তিনি গোপনভাবে দেখিয়া আসিয়াছেন। বিশেষ অনুসন্ধানে বৃদ্ধার সাংসারিক অবস্থাও অনেক জানিতে পারিয়াছেন। আজ নিশীথ সময়ে বৃদ্ধার সহিত নগরপ্রান্তে নির্দ্দিষ্ট পর্ব্বতগুহার নিকট দেখা হইবে, এরূপ কথা স্থির আছে। মারওয়ান নিয়মিত সময়ের পূর্ব্বে বৃদ্ধার বাটীর নিকট গোপনভাবে যাইয়া সমুদয় অবস্থা জানিয়া বুঝিয়াছেন যে, বৃদ্ধার কথায় কোনরূপ সন্দেহ আছে কি না। সমুদয় দেখিয়া শুনিয়া তিনি শীঘ্র শীঘ্র ফিরিয়া আসিতেছেন; নির্দ্দিষ্ট সময়ের পূর্ব্বেই আবার গিরিগুহার নিকট যাইয়া বৃদ্ধার অপেক্ষায় থাকিবেন।
সেই স্ত্রীলোকটির নাম মায়মুনা। মায়মুনার কেশপাশ শুভ্র বলিয়াই লেখক তাহাকে বৃদ্ধ বলিয়াই উল্লেখ করিয়াছেন। কিন্তু মায়মুনা বাস্তবিক বৃদ্ধা নহে। মারওয়ান চলিয়া যাইবার কিছুক্ষণ পরেই একটি স্ত্রীলোক স্বদেশীয় পরিচ্ছদ পরিধান করিয়া অন্যমনস্কভাবে কি যেন চিন্তা করিতে করিতে রাজপথ দিয়া যাইতেছিল; আব্রুহ অনাবৃত। ক্ষণে ক্ষণে আকাশে লক্ষ্য করিয়া সেই স্ত্রীলোক চন্দ্র ও “আদম সুরাতের” (নরাকার নক্ষত্রপুঞ্জের) প্রতি বার বার দৃষ্টিপাত করিতেছে। তাহার আর কোন অর্থ নাই, হয়, নির্দ্দিষ্ট সময় উত্তীর্ণ হইবার আশঙ্কা। অর্থলোভে পাপকার্য্যে রত হইবে, তাহাই আলোচনা করিয়া অন্যমনস্কভাবে যাইতেছে। তারাদল এক একবার চক্ষু বুজিয়া ইঙ্গিতে যেন তাহাকে নিষেধ করিতেছে। প্রকৃতি স্বাভাবিক নিস্তব্ধতার মধ্য হইতেও যেন “না—না” শব্দে তাহাকে বারণ করিতেছে! মায়মুনার কর্ণ টাকার সংখ্যা শুনিতে ব্যস্ত। সে বারণ শুনিবে কেন? মন সেই নির্দ্দিষ্ট পর্ব্বতগুহার নিকট; এ সকল নিবারণের প্রতি তাহার মন কি আকৃষ্ট হইতে পারে? নগরের বাহির হইয়া সে একটু দ্রুতপদে চলিতে লাগিল।
নির্দ্দিষ্ট গিরিগুহার নিকটে মারওয়ান অপেক্ষা করিতেছিলেন, মায়মুনাকে দেখিয়া তাঁহার মনের সন্দেহ একেবারে দূর হইল। উভয়ে একত্র হইলেন, কথাবার্ত্তা চলিতে লাগিল।