পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিষাদ-সিন্ধু
৭২

অকাতরে নিদ্রাসুখ অনুভব করিতেছে! কি আশ্চর্য্য! রমণীর প্রাণ কি এতই কঠিন হইতে পারে?

 মায়মুনা নিদ্রিত অবস্থাতেই শয্যোপরিস্থ উপাধান চাপিয়া ধরিয়া গােঙ্গাইতে গােঙ্গাইতে বলিতে লাগিল, “আমি নহি, আমি নহি! মারওয়ান —এজিদের প্রধান উজির মারওয়ান।” দুই তিন বার মারওয়ানের নাম করিয়া মায়মুনার নিদ্রাভঙ্গ হইল। নিদ্রিত অবস্থায় কি স্বপ্ন দেখিয়াছিল, কি কারণে ভয় পাইয়াছিল, কি কষ্টে পড়িয়াছিল, কে কি বলিল, মায়মুনার মনই তাহা জানে। মায়মুনা নিস্তব্ধ অবস্থায় শয্যোপরি বসিয়া রহিল। একদৃষ্টে কি দেখিল, কি ভাবিল,— নিজেই জানিল; শেষে বলিয়া উঠিল, “স্বপ্নসকল অমূলক চিন্তা। বুদ্ধিহীন মূর্খেরাই স্বপ্নে বিশ্বাস করিয়া থাকে। যাহাই আমার কপালে থাকুক, আমি স্বপ্নে যাহা দেখিলাম, সে ভয়ে হাজার মােহরের লােভ কখনই পরিত্যাগ করিতে পারিব না। এ কি কম কথা! একটা নয়, দুইটা নয়, দশ শত মােহর! প্রস্তরাঘাতে মারিবে!— যে দিবে সে-ই মারিবে! এ কি কথা?”—এই বলিয়াই অন্য গৃহে গমন করিল। কিঞ্চিৎ বিলম্বে নূতন আকারে, নূতন বেশে, গৃহ হইতে বহির্গত হইল। ময়মুনা এখন ধীরা, নম্রস্বভাবা, সর্ব্বাঙ্গে “বাের্‌কা”[১]। বাের্‌কা ব্যবহার না করিয়া স্ত্রীলােকেরা প্রকাশ্য রাজপথে গমনাগমন করিলে রাজবিধি অনুসারে দণ্ডনীয় হইতে হয়। সেই জন্য মায়মুনা বাের্‌কা ব্যবহার করিয়া বহির্গত হইল।

ত্রয়োদশ প্রবাহ

 মায়মুনা আজ কি উদ্দেশ্য সাধন করিতে বহির্গত,—কোথায় যাইতেছে, তাহা পাঠকগণ বােধ হয় বুঝিয়া থাকিবেন। মায়মুনা এমাম হাসানের অন্তঃপুরে প্রায়ই যাতায়াত করিত; হাস্‌নেবানুর নিকট তাহার আদর ছিল না। হাস্‌নেবানুকে দেখিলেই সে ভয়ে জড়সড় হইত। জয়নাবের


  1. আপাদ মস্তক আবরণ বস্ত্র