পাতা:বিষাদ-সিন্ধু - মীর মোশার্‌রফ হোসেন.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৯
মহরম পর্ব্ব—চতুর্দ্দশ প্রবাহ

কাটাইয়া, কথার ফাঁক দিয়া কথার বিপক্ষ করিয়া স্বপক্ষ বিপক্ষ সকল দিকে যাইয়া আজ মায়মুনা জাএদার মনের কথা পাইল। মায়মুনার মোহমন্ত্রে জাএদা যেন উন্মাদিনী!

 সপত্নীনাগিনীর বিষদন্তে যে অবলা একবার দংশিত হইয়াছে, তাহার মন ফিরিতে কতক্ষণ? চিরভালবাসা, চিরপ্রণয়ী পতির মমতা বিসর্জ্জন করিতে তাহার দুঃখ কি? এক প্রাণ, এক আত্মা স্বামীই সব—একথা প্রায় স্ত্রীরই মনে আছে, স্ত্রীরই মনে থাকে, কিন্তু সপত্নীর নাম শুনিলেই মনের আগুণ দ্বিগুণ, ত্রিগুণ, চতুর্গুণভাবে জ্বলিয়া উঠে। সে আগুন বাহির হইবার পথ পায় না বলিয়াই অন্তর ভালবাসা, প্রণয়, মায়ামমতা একেবারে পোড়াইয়া ছারখার করিয়া ফেলে।

 মায়মুনার সমুদয় কথাতেই জাএদা সম্মত হইলেন। মায়মুনা মহাসন্তুষ্ট হইয়া বলিতে লাগিল “বোন্! এতদিনে যে বুঝিয়াছ, সেই ভাল। আর বিলম্ব নাই, কোন্ সময়ে কাহার অদৃষ্টে কি ঘটে কে বলিতে পারে? যত বিলম্ব হইবে ততই তোমার অমঙ্গলের ভাগ বেশী হইবে। যাহা করিতে বসিলে, তাহার উপর আর কথা কি আছে? শুভ-কার্য্যে আর বিলম্ব কেন? ধর এই ঔষধ লও।”

 এই বলিয়া মায়মুনা শয্যার পার্শ্ব হইতে খর্জ্জুরপত্র-নির্ম্মিত একটি ক্ষুদ্র পাত্র বাহির করিল। তন্মধ্য হইতে অতি ক্ষুদ্র একটি কৌটা জাএদার হস্তে দিয়া বলিল, “বোন! খুব সাবধান! এই কৌটাটি গোপনে লইয়া যাও, সুযোগমত ব্যবহার করিও,—মনস্কামনা পূর্ণ হইবে, জয়নাবের সুখতরী ডুবিবে; এই কৌটার গুণে তুমি সকলই পাইবে। যাহা মনে করিবে তাহাই হইবে।”

 জাএদা কহিলেন, “মায়মুনা! তোমার উপদেশেই আমি সকল মায়া পরিত্যাগ করিলাম! জয়নাবের সুখস্বপ্ন আজ ভাঙ্গিব, জয়নাবের অঙ্গের আভরণ আজ অঙ্গ হইতে খসাইব, সেই আশাতেই সকলই স্বীকার করিলাম। আমার দশার দিকে ফিরিয়াও চাহিলাম না। জয়নাবের যে দশা ঘটিবে, আমারও সেই দশা। ইহা জানিয়াও কেবল সপত্নীর মনে