পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সুরের কথা VER অসাধারণ পণ্ডিত দশটি অনুস্বর জুড়ে দিতে পারেন, তা হলে সংগীত এমনি সংস্কৃত হয়ে উঠবে যে, আমাদের মতো প্ৰাকৃতজনেরা তার এক বৰ্ণও বুঝতে পারবে না। VO এ-সব তো গেল সংগীতের বর্ণপরিচয়ের কথা, শব্দবিজ্ঞানের নয়। শব্দেরও যে একটা বিজ্ঞান আছে, এ জ্ঞান সকলের নেই। সুতরাং সুরের সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব গ্ৰাহ না হলেও আলোচ্য। শব্দজ্ঞানের মতে শ্রুতি আপৌরুষেয় ; অর্থাৎ স্বরগ্রাম কোনো পুরুষ-কর্তৃক রচিত হয় নি, প্ৰকৃতির বক্ষ থেকে উখিত হয়েছে। একটি একটানা তারের গায়ে ঘা মারলে প্ৰকৃতি অমনি সাত-সুরে কেঁদে ওঠেন। এর থেকে বৈজ্ঞানিকের ধরে নিয়েছেন যে, প্ৰকৃতি র্তার একতারায় যে সকাতর সাৰ্গম আলাপ করেন, মানুষে শুধুতার নকল করে। কিন্তু সে নকলেও মাছিমারা হয় না । মানুষের গলগ্ৰহ কিংবা যন্ত্রস্থ হয়ে প্ৰকৃতিদাত্ত স্বরগ্রামের কোনো সুর একটু চড়ে, কোনো সুর একটু ঝুলে যায়। তা তো হবারই কথা। প্ৰকৃতির হৃদয়তন্ত্রী থেকে এক ঘায়ে যা বেরয়, তা যে একঘেয়ে হবে- এ তো স্বতঃসিদ্ধ। সুতরাং মানুষে এই-সব প্ৰাকৃত সুরকে সংস্কৃত করে নিতে বাধ্য। এ মত লোকে সহজে গ্ৰাহ করে ; কেননা, প্ৰকৃতি যে একজন মহা ওস্তাদ-এ সত্য লৌকিক ন্যায়েও সিদ্ধ হয়। প্রকৃতি অন্ধ, এবং অন্ধের সংগীতে বুৎপত্তি যে সহজ, এ সত্য তো লোকবিশ্রাত । প্ৰকৃতির ভিতর যে শব্দ আছে- শুধু শব্দ নয়, গোলযোগ আছে-এ কথা সকলেই জানেন ; কিন্তু তঁর গলায় যে সুর আছে, এ কথা সকলে মানেন না । এই নিয়েই তো আট ও বিজ্ঞানে বিরোধ । আর্টস্টরা বলেন, প্ৰকৃতি শুধু অন্ধ নন, উপরন্তু বধির। যার কান নেই, তার কাছে গানও নেই। সাংখ্যদর্শনের মতে পুরুষ দ্রষ্টা এবং প্রকৃতি নর্তকী ; কিন্তু প্ৰকৃতি যে গায়িকা এবং পুরুষ শ্রোতা- এ কথা কোনো দর্শনেই বলে না। আর্টিস্টদের মতে তেীর্ষত্রিকের একটি মাত্র অঙ্গ- নৃত্যই প্ৰকৃতির অধিকারভুক্ত, অপর দুটি ौऊ छ्- ऊ ब ।। এর উত্তরে বিজ্ঞান বলেন, এ বিশ্বের সকল রূপ-রস-গন্ধ-স্পৰ্শ-শব্দের উপাদান এবং নিমিত্তকারণ হচ্ছে ঐ প্রকৃতির নৃত্য। কথাটা উড়িয়ে দেওয়া চলে না, অতএব পুড়িয়ে দেখা যাক ওর ভিতর কতটুকু খাঁটি মাল আছে। শান্ত্রে বলে, শব্দ আকাশের ধর্ম ; বিজ্ঞান বলে, শব্দ আকাশের নয় বাতাসের ধর্ম।