পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইতিমধ্যে byr মস্তিষ্কের কাজ ; সুতরাং ‘ইতিমধ্যে’ বলতে যে অবসর বোঝায়, তার ভিতর সে রচনা করা সম্ভব কি না- তা আপনারাই বিবেচনা করবেন। তবে যদি কেউ বলেন। যে, লেখার সঙ্গে মস্তিষ্কের সম্বন্ধ থাকাই চাই- এমন-কোনো নিয়ম নেই, তা হলে অবশ্য গ্যেটের মতের মূল্য অনেকটা কমে আসে। হাজার তাড়াহুড়ো করলেও লেখা-জিনিসটে যে কিঞ্চিৎ সময়সাপেক্ষ, তার প্রমাণ উদাহরণের সাহায্যে দেওয়া যেতে পারে। প্ৰথমে কবিতার কথা ধরা যাক। লোকের বিশ্বাস যে, কবিতার জন্মস্থান হচ্ছে কবির হৃৎপিণ্ড । তা হলেও হৃদয়ের সঙ্গে কলমের এমন-কোনো টেলিফোনের যোগাযোগ নেই, যার দরুন হৃদয়ের তারে কোনো কথা ধ্বনিত হওয়ামাত্র কলমের মুখে তা প্ৰতিধ্বনিত হবে। আমার বিশ্বাস যে, যে-ভাব হৃদয়ে ফোটে, তাকে মস্তিষ্কের বক-যন্ত্রে না চুইয়ে নিলে কলমের মুখ দিয়ে তা ফোটা-ফোটা হয়ে পড়ে না। কলমের মুখ দিয়ে অনায়াসে মুক্ত হয় শুধু কালি, সাত রাজার ধন কালো মানিক নয়। অতএব কবিতা রচনা করতেও সময় চাই। তার পর ছোটোগল্প। মাসিকপত্রের উপযোগী গল্প লিখতে হলে প্ৰথমে কোনো-না- কোনো ইংরেজি বই কিংবা মাসিকপত্র পড়া চাই। তার পর সেই পঠিত গল্পকে বাংলায় গঠিত করতে হলে তাকে রূপান্তরিত ও ভাষান্তরিত করা চাই। এর জন্যে বোধ হয়। মূলগল্প লেখবার চাইতেও বেশি সময়ের আবশ্যক। কিছুদিন পূর্বে ভারতবর্ষের অতীত সম্বন্ধে যা-খুশি-তাই লেখবার একটা সুবিধে ছিল। 'একালে এ দেশে কিছুই নেই, অতএব সে কালে এ দেশে সব ছিল'- এই কথাটা নানারকম ভাষায় ফলিয়ে-ফেনিয়ে লিখলে সমাজে তা ইতিহাস বলে গ্ৰাহ হত। কিন্তু সে সুযোগ আমরা হারিয়েছি। এ কালে ইতিহাস কিংবা প্রত্নতত্ত্ব সম্বন্ধে লিখতে হলে তার জন্য এক-লাইব্রেরি বই পড়াও যথেষ্ট নয়। প্রত্নৱত্ব এখন মাটি খুঁড়ে বার করতে হয়, সুতরাং ‘ইতিমধ্যে’, অর্থাৎ সম্পাদকীয় আদেশের তারিখ এবং সামনেমাসের পয়লার মধ্যে, সে কাজ করা যায় না। অবশ্য ম্যালেরিয়ার বিষয় কিছুই না জেনে অনেক কথা লেখা যায় ; কিন্তু সে লেখা সাহিত্য-পদবাচ্য কি না সে বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে। যার এক পাশে ভ্ৰমরগুঞ্জন আর অপর পাশে মধু, তাই আমরা সাহিত্য বলে স্বীকার করি। দুঃখের বিষয়, ম্যালেরিয়ার এক পাশে মশকগুঞ্জন আর অপর পাশে কুইনিন। সুতরাং সাহিত্যেও ম্যালেরিয়া হতে দূরে থাকাই শ্ৰেয়। বিনা চিন্তায়, বিনা পরিশ্রমে আজকাল শুধু দুটি বিষয়ের আলোচনা করা চলে ; এক হচ্ছে উন্নতিশীল রাজনীতি, আর-এক হচ্ছে স্থিতিশীল সমাজনীতি। কিন্তু এ দুটি বিষয়ের আলোচনা সচরাচর সভাসমিতিতেই হয়ে থাকে। অতএব