পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বর্ষার কথা এ উভয়ের ভিতর আর-কোনো মিল নেই। মেঘদূতের মেঘ শান্ত-দান্ত ; সে বন্ধুর কথা শোনে, এবং যে পথে যেতে বলে, সেই পথে যায়। সে যে কতদূর রসজ্ঞ, তা তার উজ্জয়িনী-প্ৰয়াণ থেকেই জানা যায়। সে রমণীর হৃদয়জ্ঞ, স্ত্রীজাতির নিকট কোন ক্ষেত্রে হুংকার করতে হয় এবং কোন ক্ষেত্রে অল্পভাষে জল্পনা করতে হয়, তা তার বিলক্ষণ জানা আছে। সে করুণ, সে কনকনিকষ্যস্মিগ্ধ বিজুলির বাতি জেলে সুচিভেদ্য অন্ধকারের মধ্যে অভিসারিকাদের পথ দেখায়, কিন্তু তাদের গায়ে জল বর্ষণ করে না। সে সংগীতজ্ঞ, তার সখা অনিল যখন কীচক-রন্ধে মুখ দিয়ে বংশীবাদন করেন, তখন সে মৃদঙ্গের সংগীত করে। এক কথায় ধীরোদাত্ত নায়কের সকল গুণই তাতে বর্তমান । সে মেঘ তো মেঘ নয়, পুষ্পকরথে আরূঢ় স্বয়ং বরুণদেব। সে রথ অলকার প্রাসাদের মতো ইন্দ্রচাপে সচিত্র ললিতবনিতাসীনাথ মুৱজধ্বনিতে মুখরিত। সে মেঘ কখনো শিলাবৃষ্টি করে না, মধ্যে মধ্যে পুষ্পবৃষ্টি করে। এহেন মেঘ যদি কবিতার বিষয় না হয়, তা হলে সে বিষয় আর কী হতে পারে ? কিন্তু যেহেতু আমাদের পরিচিত বৰ্ষা নিতান্ত উদভ্ৰান্ত উচ্ছঙ্খল, সেই কারণেই তার বিষয় কবিত্ব করা সম্ভব হলেও অনুচিত। পৃথিবীতে মানুষের সব কাজের ভিতর একটা উদ্দেশ্য আছে আমার বিশ্বাস, প্ৰকৃতির রূপবর্ণনার উদ্দেশ্য হচ্ছে তার সৌন্দর্যের সাহায্যে মানব-মনকে শিক্ষাদান করা । যদি তাই হয়, তা হলে কবিরা কি বর্ষার চরিত্রকে মানুষের মনের কাছে আদর্শস্বরূপ ধরে দিতে চান ? আমাদের মতো শাস্ত সমাহিত সুসভ্য জাতির পক্ষে, বর্ষা নয়, হেমন্ত হচ্ছে আদর্শ ঋতু। এ মত আমার নয়, শাস্ত্রের : নিম্নে উদধূত বাক্যগুলির দ্বারাই তা প্ৰমাণিত হবে : ‘ঋতুগণের মধ্যে হেমন্তই স্বাহকার, কেননা হেমন্ত এই প্ৰজাসমূহকে নিজের বশীভূত করিয়া রাখে, এবং সেইজন্য হেমন্তে ওষধিসমূহ স্নান হয়, বনস্পতি-সমূহের পত্রনিচয় নিপতিত হয়, পক্ষীসমূহ যেন অধিকতরভাবে স্থির হইয়া থাকে ও অধিকতর নীচে উড়িয়া বেড়ায়, এবং নিকৃষ্ট ব্যক্তিদের লোমসমূহ যেন (শীতপ্রভাবে) নিপতিত হইয়া যায়, কেননা, হেমন্ত এই-সমস্ত প্ৰজাকে নিজের বশীভূত করিয়া থাকে। যে ব্যক্তি ইহা এইরূপ জানেন, তিনি যে (ভূমি) ভাগে থাকেন তাহাকেই শ্ৰী ও শ্রেষ্ঠ অন্নের জন্য নিজের করিয়া তোলেন ।’ -শতপথ ব্ৰাহ্মণ আমরা যে শ্ৰীভ্রষ্ট এবং শ্ৰেষ্ঠ অন্নহীন তার কারণ আমরা হেমন্তকে এইরূপে জানি নে ; এবং জানি নে যে, তার কারণ কবিরা হেমস্তের স্বরূপের বর্ণনা করেন না, বর্ণনা করেন। শুধু বর্ষার ; যে বর্ষা ওষধিসমূহকে মান না ক’রে সবুজ ক’রে তোলে। स्त्रीवांp s७३s