পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

y do বীরবলের হালখাতা সকল দেশেই মনেরও একটা চলতি পথ আছে। অভ্যাসবশত এবং সংস্কারবশত দলে দলে লোক সেই পথ ধরেই চলতে ভালোবাসে ; কারণ মুখ্যত সে পথ হচ্ছে জনসাধারণের জীবনযাত্রার পথ। সে পথ মহাজনদের হাতে রচিত হয় নি, কিন্তু লোকসমাজের পায়ে গঠিত হয়েছে। আপনারা বঙ্গসরস্বতীকে সেই পরিচিত পথ ছেড়ে একটি নূতন এবং কাচা রাস্তায় চালাতে চান। আপনারা বলেন ‘সম্মুখে চলো, কিন্তু বুদ্ধিমানেরা বলেন ‘নগণস্যাগ্ৰতোগচ্ছেৎ’। আপনাদের মত এই যে, সামাজিক জীবনের পদানুসরণ করা কবি কিংবা দার্শনিকের মনের কাজ নয়। জীবনকে পথ-দেখানেই হচ্ছে সে মনের ধর্ম, অতএব কর্তব্য । সুতরাং আপনাদের দ্বারা উদ্ভাবিত, অপরিচিত এবং অপরীক্ষিত চিন্তামার্গে অগ্রসর হতে অনেকেই অস্বীকৃত হবেন । বিশেষত, যখন সে পথের একটা নির্দিষ্ট গন্তব্য স্থান নেই, যদি-বা থাকে তো সে অলকা বর্তমান ভারতের পরপারে অবস্থিত। শুনতে পাই, ইউরোপের সকল স্থলপথই রোমে যায়। তেমনি এ দেশের সকল হাঁটাপথই কাশী যায়। কিন্তু আপনারা যখন বাঙালির মনকে কাশীযাত্ৰা না করিয়ে সমুদ্রযাত্রা করতে চান, তখন যে নূতন লেখকরা সবুজ পত্র নিয়ে আপনাদের সঙ্গে একপঙক্তিতে বসে যাবেন, এরূপ আশা করা বৃথা । সুতরাং আপনাদের সেই শ্রেণীর লেখক সংগ্ৰহ করতে হবে, যাদের কাছে আপনাদের সাহিত্য আচল নয়। এ দলের বহু লোক আপনার হাতের গোড়াতেই Vic গত বৈশাখ-মাসের ‘ভারতী’-পত্রিকাতে আপনি বিলোতফেরত বলে নিজের পরিচয় দিয়েছেন। প্ৰাচীন ব্ৰাহ্মণসমাজে এ সম্প্রদায়ের স্থান নেই, সুতরাং নৃতন ব্ৰাহ্মণসমাজ অর্থাৎ সাহিত্যসমাজে এদের তুলে নেওয়া হচ্ছে আপনার পক্ষে কর্তব্য। অতীতের উদ্ধারের পাল্টা জবাব দিতে হলে পতিতের উদ্ধার করা আবশ্যক। বিলোতফেরতদের লেখায়, আর-কিছু থাক। আর না-থাক, নৃত্যুনত্ব থাকবেই। মাইকেল দত্ত, শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, এই তিনটি বিলোতফেরত কবির ভাষায় ও ভাবে এতটা অপূর্বতা ছিল যে, আদিতে তার জন্য এদের দুজনকে পুরাতনের কাছে অনেক ঠাট্টাবিদ্রুপ সহ্য করতে হয়েছিল। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়কে যে কেউ ঠাট্টা করেন নি, তার কারণ, তিনি সকলকে ঠাট্টা করেছেন । এই থেকেই প্ৰমাণ পাওয়া যায় যে, বিলোতফেরতের হাতে পড়লে বঙ্গসাহিত্যের চেহারা ফিরে যায়। আসল কথা, এ যুগের বঙ্গসাহিত্য হচ্ছে বিলেতি ঢঙের সাহিত্য। যে হিসেবে দাশরথি রায়ের পাচলি ও গোবিন্দ অধিকারীর যাত্ৰা খাঁটি বাংলাসাহিত্য, সে হিসেবে নবসাহিত্য খাটি বঙ্গসাহিত্য নয়। এর জন্যে কেউ-কেউ দুঃখও করেন। চোখের জল