পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ግሮg S S OS ফেলবার কোনো সুযোগ বাঙালি ছাড়ে না। ব্যাস-বাল্মীকির জন্যও আমৱা যেমন কঁদি, পাচলিওয়ালাদের জন্যও আমরা তেমনি কঁাদি। কিন্তু সমালোচকেরা চক্ষের জলে বক্ষ ভাসিয়ে দিলেও বঙ্গসরস্বতী আর গোবিন্দ অধিকারীর অধিকারভুক্ত হবেন না, এবং দাশরথিকেও সারথি করবেন না । আমাদের নবসরস্বতী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্ৰতিষ্ঠাতা এবং কলেজে-শিক্ষিত লোকেরাই অদ্যাবধি তীর সেবা করে আসছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন ; কেউ ফোটা কেটে, কেউ হ্যাট পরে। এই প্ৰভেদের কারণ নির্দেশ করছি। পুরাকালে যখন ক্ষত্ৰিয়েরা একসঙ্গে সুরা এবং সোম পান করতেন, তখন ব্ৰাহ্মণোৱা এই শান্তি-বচন পাঠ <e SCVOC : ‘আহে সুরা ও সোম, তোমাদের জন্য দেবগণ পৃথক পৃথক রূপে স্থান কল্পনা করিয়াছেন। তুমি তেজস্বিনী সুৱা, আর ইনি রাজা সোম, তোমরা আপন আপন স্থানে প্ৰবেশ করে।” আমরাও কলেজে যুগপৎ ইংরেজি-সুরা এবং সংস্কৃত-সোম পান করেছি। দুৰ্ভাগ্যক্রমে আমাদের দুটি পাকস্থলী না থাকায় সেই সুরা আর সোম আমাদের উদ্দৱস্থ হয়ে পরস্পর লড়াই করছে। আমাদের সাহিত্য সেই কলহে মুখরিত হয়ে উঠেছে। আমাদের যে নেশা ধরেছে, সে মিশ্ৰ-নেশা । তবে কোথাও-বা তাতে সুৱার তেজ বেশি, কোথাও-বা সোমের। মনোজগতে যে আমরা সকলেই বিলোতফেরত, এই কথাটা মনে রাখলে সাহিত্যমন্দিরে আপনার সম্প্রদায়কে প্ৰবেশ করতে সাহিত্যের পাণ্ডাৱা আর বাধা দেবেন না, বরং উৎসােহই দেবেন ; কেননা, আমরা সকলেই ইংরেজিসাহিত্যে শিক্ষিত, আপনার উপরন্তু ইংরেজিসভ্যতায় দীক্ষিত। সামাজিক হিসেবে বিলোতফেরতের এই গুরুগৃহবাসের ফল যাই হোক, সাহিত্য হিসেবে এর ফল ভালো হবারই সম্ভাবনা । কারণ ইংরেজি-জীবনের সঙ্গে ইংরেজিসাহিত্যের সম্বন্ধ অতিঘনিষ্ঠ । ইংরেজি-জীবনের সঙ্গে যার সাক্ষাৎ পরিচয় আছে, তিনি জানেন যে, ইউরোপে সাহিত্য হচ্ছে জীবনের প্রকাশ ও প্ৰতিবাদ ; আর সে পরিচয় যার নেই, তিনি ভাবেন যে ও শুধু বাদানুবাদ। সাহিত্যের ভাষ্য ও টীকা জীবনসুত্র হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে তা শুধু কথার-কথা হয়ে ওঠে। সেই কারণে নবশিক্ষিতসম্প্রদায়ের জীবনে ইংরেজি-জীবনের প্রভাব যে পরিমাণে কম, তাদের রচিত সাহিত্যে ইংরেজি-কথার প্রভাব তত বেশি। এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ আমাদের স্বদেশী বক্তৃতায় ও লেখায় নিত্য পাওয়া যায়। সংস্কৃতভাষার ছদ্মবেশ পরিয়েও বিলেতি মনোভাবকে আমরা গোপন করে রাখতে পারি নে। বিদেশী ভাবকে আমি