পাতা:বীরবাণী - স্বামী বিবেকানন্দ.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
বীরবাণী।

শোভাময় মন্দির আলয়, হ্রদে নীলপয়, তাহে কুবলয় শ্রেণী।
দ্রাক্ষাফল-হৃদয়-রুধির,[১] ফেনশুভ্রশির, বলে মৃদু মৃদু বাণী॥
শ্রুতিপথে বীণার ঝঙ্কার, বাসনা বিস্তার, রাগ তাল মান লয়ে।
কতমত ব্রজের উচ্ছ্বাস গোপী তপ্তশ্বাস, অশ্রুরাশি পড়ে বয়ে॥
বিষফল যুবতী অধর, ভাবের সাগর নীলোৎপল দুটি আঁখি।
দুটি কর, বাঞ্ছা অগ্রসর প্রেমের পিঞ্জর তাহে বাঁধা প্রাণ পাথ॥

ডাকে ভেরী, বাজে ঝরর্ ঝরর্ দামামা নক্কাড়, বীর দাপে কাঁপে ধরা।
ঘোষে তোপ বব-বব-বম, বব-বব-বম, বন্দুকের কড়কড়া॥
ধুমে ধূম ভীম রণস্থল, গরজি অনল বমে শত জ্বালামুখী।
ফাটে গোলা লাগে বুকে গায়, কোথা উড়ে যায়, আসোয়ার ঘোড়া
হাতি॥
পৃথ্বীতল কাঁপে থর থর, লক্ষ অশ্ববর পৃষ্ঠে বীর ঝাঁকে রণে।
ভেদি ধূম গোলা বরিষণ, গুলি স্বন্ স্বন্, শত্রুতোপ আনে ছিনে॥
আগে যায় বীর্য্য পরিচয়, পতাকানিচয় দণ্ডে ঝরে রক্ত ধারা।
সঙ্গে সঙ্গে পদাতিক দল, বন্দুক প্রবল, বীরমদে মাতোয়ারা॥
ঐ পড়ে বীর ধ্বজাধারী, অন্য বীর তারি ধ্বজা লয়ে আগে চলে।
তলে তার ঢের হয়ে যায় মৃত বীরকায়, তবু পিছে নাহি টলে॥

দেহ চায় সুখের সঙ্গম, চিত্ত বিহঙ্গম সঙ্গীত সুধার ধার।
মন চায় হাসির হিন্দোল, প্রাণ সদা লোল, যাইতে দুঃখের পার॥
ছাড়ি হিম শশাঙ্কচ্ছটায়, কেবা বল চায়, মধ্যাহ্ন তপন জ্বালা।
প্রাণ যার চণ্ড দিবাকর, স্নিগ্ধ শশধর, সেও তবু লাগে ভালো॥


  1. মদ। দ্রাক্ষাফলের রস (হৃদয়-রুধির) হইতে মদ প্রস্তুত হয়; উহা গ্লাসে ঢালিলেই উপরটা সাদা ফেনাযুক্ত হয় ও মৃদু মৃদু শব্দ করে।