পাতা:বুড়ো আংলা-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১১৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 কঙ্ক বললেন—“শোনো তবে বলি!”

 কথার নাম শুনেই চারদিক থেকে হাঁস পাখি যে-যেখানে ঘুমিয়ে ছিল চাঁদের আলোতে টিনের ছাতে বুড়ো কঙ্ক-পাখিকে ঘিরে বসল। চাঁদটাও যেন গল্প শুনতে কঙ্কের ঠিক পিঠের দিকে টিনের ছাদের কার্নিসে এসে বসল।

 কঙ্ক গলা খাঁকানি দিয়ে শুরু করলেন:

 আমাদের কঙ্ক বংশের শেষ অঙ্কের যে আমি, আমার স্বর্গীয় প্রপিতামহ ছোট-কঙ্ক, তার প্রস্বর্গীয় মধ্যম প্রপিতামহ মেঝো-কঙ্ক মহাশয়ের অতিবৃদ্ধ প্রপিতামহ ধর্মাবতার বড়-কঙ্ক—তিনি কাম্য বনে এক রম্য সরোবরে বাস করছেন, এদিকে একদিন হয়েছে কি, না ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরের তৃষ্ণা পেয়েছে। বনের মধ্যে তেষ্টা পেয়েছে, খুঁজে-খাঁজে জল খেয়ে নিলেই হত, না হুকুম করলেন—‘ওরে ভীম জল নিয়ে আয়।’ ভীম চললেন—‘জল খুঁজে খুঁজে তাঁরও তেষ্টা পেয়ে গেল। সেই সময় আমাদের ধর্মাবতার বড়-কঙ্ক সে পুকুরে পাহারা দিচ্ছিলেন। সেই কতকালের পানা পুকুরটার দিকে ভীমের নজর পড়ল, জল দেখে ভীমের তেষ্টা যুধিষ্ঠিরের চেয়ে দুগুণ বেড়ে গেল। ভীম তাড়াতাড়ি পুকুরে নামলেন, অঞ্জলি ভরে বৃকোদর প্রায় পুকুরের অর্ধেক জল তুলে নিলেন দেখে আমার স্বৰ্গীয় প্রপিতামহের পিতামহের অতিবৃদ্ধ প্রপিতামহ বলে উঠলেন—‘অঞ্জলি করিয়া জল না করিহ পান, সমস্যা পু্রণ করি কর জল পান—নতুবা তোমার মৃত্যু।’

 সমস্যা দিয়ে জল ফিলটার করে খাবার দেরি সইল না, বৃকোদর আমাদের ধর্মাবতারের পানা-পুকুরের পচাজল চকচক করে খেয়ে ফেললেন। যেমন খাওয়া, অমনি কম্পজ্বর সঙ্গে-সঙ্গে মৃত্যু। তার পর অর্জুন এলেন, নকুল সহদেব এলেন, দ্রৌপদী এলেন, সবার সেই দশা, কেউ সমস্যা দিয়ে জল শোধন করে নিতে চাইলেন না। শেষে যুধিষ্ঠির এসে ধর্মাবতার কঙ্কের

১১৫