তার বৌকে গান গেয়ে ঘুম ভাঙাচ্ছে আর গলা ফুলিয়ে আদর করে ডাকছে—“বুবু ওঠো দেখি মম্।”
রিদয় অমনি বলে উঠল—“আদর দেখ উহুঃ।”
ঘুঘু গলা তুলে বললে—“কে রে কে রে?”
রিদয় তাকেও শুনিয়ে দিলে—“কাকে ধরা যক্!”
এবার ডোমকাক রেগে রিদয়কে ডানার থাপ্পড় দিয়ে বললে—“ফের বকচিস, চুপ!”
ঢোঁড়াকাক বলে উঠল—“বকুক না যত পারে, পাখিগুলো ভাবচে আমরাও ঠাট্টা-তামাশা শিখেছি।”
ডোমকাক আর উচ্চবাচ্য করলে না। রিদয় ঘাঁটিতে-ঘাঁটিতে সব পাখিকে জানিয়ে দিতে-দিতে চলল—তাকে কাকে ধরেছে!
এমনি বন ছাড়িয়ে তারা একটা নগরের উপরে এসে পড়ল। নদীর ধারে মস্ত শিব-মন্দির, তারি চূড়োয় ত্রিশূলের ডগায় বসে শালিক তার বৌকে শুনিয়ে রাগরাগিনীতে গলা সাধছে; বৌ তার পঞ্চবটির বাসায় ডিমে তা দিচ্ছে আর কর্তার গান শুনছে—“সা রে গা মা পা—চারটে ডিমে তা, ধা নি সা—দুই জোড়া ছা!”
রিদয় অমনি আকাশ থেকে বলে উঠল—“কাগে খাবে গা!” শালিক “কেও?” বলে মুখ ফেরাতেই রিদয় শুনিয়ে দিলে—“কাগে ধরা যক্।”
যতই দক্ষিণ দিকে এরা এগোতে থাকল ততই বড়-বড় নদী খাল-বিল ক্ষেত মাঠ-ঘাট গ্রাম-নগর দেখা দিতে থাকল। একটা মস্ত বিলের ধারে একটা হাঁস আর একটা হাঁসের সামনে দাঁড়িয়ে কেবলি ঘাড় নাড়ছে আর বলছে, “চেয়ে দেখ্ আমি তোরি চিরদিন আমি তোরি।”
রিদয়ের মনে হল যেন খোঁড়া আর বালি দুজনে কথা কইছে; সে অমনি তাদের শুনিয়ে বলে উঠল—“এসা দিন রহে থোড়ি রহে থোড়ি!”