দিক থেকে গঙ্গাসাগরের পথ পশ্চিম-উত্তর হয়ে হিমালয় পেরিয়ে পুবে ঘুরে পড়েছে মানস-সরোবরে; আর ব্রহ্মপুত্রের পথ উত্তর-পুব হয়ে পশ্চিম ঘুরে শেষ হয়েছে মানস-সরোবরে—যেন বেড়ির দুই মুখ এক জায়গায় গিয়ে মিলেছে। এই বেড়ির মিলের কাছে রয়েছে সুন্দর-বন আর আমতলি; মাঝখানে অন্নপূর্ণার অন্নপাত্র সুজলা সুফলা সোনার বাঙলা-দেশ; ডাইনে আসাম; বাঁয়ে বেহার অঞ্চল।
সুবচনীর খোঁড়া হাঁস রিদয়ের সঙ্গে মাঠে বেরিয়ে প্যাঁক-প্যাঁক করে আপনার মনেই বকতে-বকতে চলল—“উঃ বাবারে! আর যে চলতে পারিনে! পা ছিঁড়ে পড়ছে! কেন এলুম গো, মরতে ঘর থেকে বেরিয়ে ছিলুম! এতদূরে মানস-সরোবর কে জানে গো—এ্যঁঃ!” খোঁড়া হাঁস হাঁপাচ্ছে আর চলছে আর বকছে। বাতে বেচারার পা-টি পঙ্গু। সে অনেক কষ্টে খাল-ধারে—যেখানে গোটাকতক বক, গোটাকতক পাতি-হাঁস চরছিল, সেই পর্যন্ত এসে উলুঘাসের উপরে খোঁড়া পা রেখে জিরোতে বসল।
রিদয় কি করে? একটা কচু-পাতার নিচে বসে আকাশের দিকে চেয়ে দেখতে লাগল—দলে-দলে হাঁস উত্তর-মুখে উড়ে চলেছে—নানা কথা বলাবলি করতে-করতে! রিদয় শুনলে হাঁসেরা বাজে বকছে না; কাজের কথাই বলতে-বলতে পথ চলেছে।
সেথো হাঁসেরা বললে—“থাকে-থাকে ফুলের গন্ধ লাগছে নাকে!”
অমনি পাণ্ডাহাঁস যে সব আগে চলেছে, জবাব দিলে—“ছুটলে খোসবো বাদলা রাখে।”
সেথোরা বললে—“নিচে-বাগে নামল তাল-চড়াই!”
পাণ্ডা উত্তর করলে—“উপরে বড়ই ঠাণ্ডা ভাই!”
সেখোরা বললে—“জাল টেনে মাকড় দিল চম্পট!”
২৬