পাতা:বুড়ো আংলা-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/২৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

সে বুঝলে সবুজ ছকগুলো ধান-খেত—নতুন শিষে ভরে রয়েছে! হলদে ছকগুলো সরষে-খেত—সোনার ফুলে ভরে গিয়েছে! মেটে ছকগুলো খালি জমি—এখনো সেখানে ফসল গজায়নি। রাঙা ছকগুলো শোন আর পাট। সবুজ পাড়-দেওয়া মেটে-মেটে ছকগুলো খালি জমির ধারে-ধারে গাছের সার। মাঝে-মাঝে বড়-বড় সবুজ দাগগুলো সব বন। কোথাও সোনালী, কোথাও লাল, কোথাও ফিকে নীলের ধারে ঘন সবুজ ছককাটা ডোরাটানা জায়গাগুলো নদীর ধারে গ্রামগুলি—ঘর-ঘর পাড়া-পাড়া ভাগ করা রয়েছে। কতকগুলো ছকের মাঝে ঘন সবুজ, ধারে-ধারে খয়েরী রঙ—সেগুলো হচ্ছে আম-কাঁটালের বাগান—মাটির পাঁচিলেঘেরা। নদী, নালা, খালগুলো রিদয় দেখলে যেন রুপোলী ডোরার নক্সা—আলোতে ঝিকঝিক করছে। নতুন ফল, নতুন পাতা যেন সবুজ মখমলের উপরে এখানে-ওখানে কারচোপের কাজ!—যতদূর চোখ চলে এমনি! আকাশ থেকে মাটি যেন সতরঞ্চি হয়ে গেছে দেখে রিদয় মজা পেয়েছে; সে হাততালি দিয়ে যেমন বলছে—“বাঃ, কি তামাশা!” অমনি হাঁসেরা যেন তাকে ধমকে বলে উঠল—“সেরা দেশ—সোনার দেশ—সবুজ দেশ—ফলন্ত-ফুলন্ত বাঙলাদেশ!”

 রিদয় একবার গণেশকে নিয়ে হাসি-তামাশা করতে গিয়ে বিপদে পড়েছে, হাঁসের ধমক শুনে মুখ বুজে গম্ভীর ভালোমানুষটির মতে পিটপিট করে চারদিকে চাইতে লাগল আর মিটমিট করে একটু-একটু হাসতেও থাকল—খুব ঠোঁট চেপে। দলে-দলে কত পাখি—কেউ চলেছে দক্ষিণ থেকে উত্তরে, কেউ উত্তর থেকে দক্ষিণে, পুব থেকে পশ্চিমে, পশ্চিম থেকে পুবে; আর পথের মাঝে দেখা হলেই এদল ওদলকে শুধাচ্ছে—এদিকের খবর, ওদিকের খবর—খবর কি ভাই, খবর কি? অমনি বলাবলি চলল— “ওধারে জল হচ্ছে।” “এধারে রোদে পুড়ছে।” “সেধারে ফল ফলেছে।”

৩১