একটা করে বিশেষণ দিয়ে কুঁকড়ো, সব যেমন-যেমন প্রশ্ন হচ্ছে, সঙ্গে-সঙ্গে তার উত্তর দিয়ে যাচ্ছে। যাত্রীরাও বুঝে নিচ্ছে কোন জায়গায় কি পাওয়া যায়, কোথায় নামলে বিপদ, কোথায় নিরাপদ—কোথায় কি খাওয়া পাওয়া যায় তা পর্যন্ত! মানুষে হয়তো দিয়েছে গ্রামের নাম ‘ভদ্রপুর’ কিন্তু সেখানে না আছে ফলের বাগান, চরবার খাল, বিল, মাঠ; লোকগুলোও চোয়াড়; পাখির ভাষায় সে গ্রামের নাম হল—‘নরককুণ্ড’। কোনো দুদে জমিদার প্রজার সর্বনাশ করে তেতলা বাড়ি ফেদে তার নাম দিয়েছে ‘অলকাপুরী’; কিন্তু সেখানে কোনোদিন কারু পাত পড়ে না; শেয়ালকুকুর কেঁদে যায়; পাখিরা মিলে সে বাড়ির নাম দিলে ‘পোড়াবাড়ি’। হয়তো একটা পাড়া—সেখানে ভণ্ড বৈরাগীর আড্ডা; তারা দিনে মালা জপে, রাতে বাড়ি-বাড়ি সিঁদ দিয়ে আসে; সে জায়গাটার নাম মানুষ দিলে ‘বৈরিগি পাড়া’; কিন্তু পাখিরা তাকে বললে নিগিরিটিং—ভাবটা যে কেবল এদের খঞ্জনীই সার! হয়তো এক ভালো পরগনার ভালো জমিদার কিন্তু পরগনার নাম মানুষে বলছে ‘খোলা মুচি’; কিন্তু পাখিরা দেখচে সেখানে ধান খুব, ফল ভালো; ভালো জমিদার; বন্দুক-হাতে শিকারে বেরোয় না; আমনি সে পরগনার নাম তারা হাকলে—‘রাজভোগ—সাবেক রাজভোগ—হাল রাজভোগ।’ হয়তে ‘রাজভোগ’ যেমন, তেমনি কোনো ভালো পরগনা নষ্ট জমিদারের হাতে পড়ে উচ্ছন্ন গেল—সেখানে না মেলে ঘাস, না আছে ভালো জল, না আছে বাগান, থাকবার মধ্যে মাতাল জমিদারের বন্দুকের গুলী, দুঁদে নায়েবের লাঠি-সোটা; মানুষ সে পরগনার নাম ‘লক্ষ্মীপুর’ দিলেও পাখিরা তাকে বললে ‘মশাল-চুলি’।
কোনো-কোনো জায়গায় সাতপুরুষ ধরে ভালো মানুষ, ভালো আবহাওয়া, ভালো খাওয়া-দাওয়া, খালবিল হাটবাজার গুলজার; সেখানকার কুঁকড়ো বুক-ফুলিয়ে হাকলে—“মনোহর নগর—সাবেক মনোহর নগর