পাতা:বুড়ো আংলা-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৩৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

সরোবর—চলেছি, চলেছি!” অমনি সরাল, ঘেংরাল এরা উত্তর দিচ্ছে—“যেও না যেও না, বড় শীত। যেও পরে, যেও পরে।”

 বুনো হাঁসের দল আরো নিচে নেমে একসঙ্গে বলে উঠল—“ভারি মজা, উড়তে মজা—শীতে মজা-পাহাড়ে মজা। উড়তে শেখাব; চলে এস না!”

 সরাল, ঘেংরাল কোথাও উড়ে যাবে না; যেখানকার সেখানে থাকবে, অথচ উড়তে পারে না বললে তারা ভারি চটবে; এবারে বুনো হাঁসের কথায় তারা জবাবই দিলে না। তখন বালু-হাঁসের দল একবারে মাটির কাছে নেমে এসে বলে উঠল—“ওরে হাঁস নয় রে—ভেড়া!” তারপর হাঃ-হাঃ করে হাসতে-হাসতে ডানায় তালি দিতে-দিতে আবার আকাশে উঠল। নিচে থেকে ঘোরো-হাঁস তারা গলা চিরে গালাগালি শুরু করলে—“মর, মর! গুলি খেয়ে মর, শীল পড়ে মর, বাতে ধরে মর, বাজ পড়ে মর, বিদেশে মর, বিভূঁয়ে মর!”

 এমনি হাসি-তামাশার মধ্যে রিদয় আনন্দে চলেছে। কিন্তু তবু নিজের দুরবস্থা ভেবে—সে যে মা-বাপ ঘর-বাড়ি ছেড়ে কোথায় নির্বাসনে চলেছে, সে কথা মনে করে—এক-একবার তার চোখে জলও আসছে। কিন্তু তবু এই আকাশ দিয়ে একেবারে হুহু করে উড়ে চলায় কি মজা, কত আনন্দ! বাতাসে কোথাও ভিজে মাটির গন্ধ, কোথাও ফোটা-ফুলের খোসবো, কোথাও পাকা ফলের কি মিঠে বাসই আসছে! পৃথিবীর গায়ের বাতাস যে এমন সুগন্ধে ভরা রিদয় আগে তো জানেনি! মেঘের উপর দিয়ে জলের চেয়ে পরিষ্কার বাতাসের উপর দিয়ে ভেসে চলতে-চলতে রিদয়ের মনে হতে লাগল যেন সব দুঃখ, সব কষ্ট, পৃথিবীর যত কিছু জ্বালা-যন্ত্রণা ছেড়ে সে সত্যি উঠে এসেছে সেইখানে, যেখানে ধুলো নেই, বালি নেই, ভয় নেই, ভাবনা নেই, রোগ নেই, শোক নেই—কেবলি আনন্দে উড়ে চলা দিন-রাত!

৩৫