পাতা:বুড়ো আংলা-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৪০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

গণেশের সন্ধান করা যেতে পারবে। এই ভেবে রিদয় খোঁড়া হাঁসকে জবাব দেবে এমন সময় পিছনে অনেকগুলা ডানার ঝটাপট শোনা গেল। এককুড়ি বুনো হাঁস একসঙ্গে জল ছেড়ে ডাঙায় উঠে গায়ের জল ঝাড়ছে। তারপরে মাঝে চকা-নিকোবরকে রেখে সারিবন্দী সব হাঁস তাদের দিকে এগিয়ে আস্তে লাগল। খোঁড়া হাঁস বুনো হাঁসদের চেহারা দেখে একটু ভয় খেলে। সে ভেবেছিল হাঁস-মাত্রে পোষা হাঁসের মতো দেখতে; আর ধরন-ধারণও সেই রকম। কিন্তু এখন দেখলে বুনো হাঁসগুলো বেঁটে-খাটো গাঁট্টা-গোঁট্টা-কাটখোট্টা-গোছের। এদের রঙ তার মতো শাদা নয়, কিন্তু ধুলো-বালির মতো ময়লা, পালক এখানে খয়েরী, ওখানে খাকির ছোপ। আর তাদের চোখ দেখলে ভয় হয়—হলুদবর্ণ—যেন গুলের আগুন জ্বলছে! খোঁড়া বরাবর দেখে এসেছে হাঁস চলে হেলতে-দুলতে—পায়ে-পায়ে; কিন্তু এরা চলছে খটমট চটপট-যেন ছুটে বেড়াচ্ছে। আর এদের পাগুলো বিশ্রী—চ্যাটালো, কেটো-কেটো, ফটা-চটা—হতকুৎসিত! দেখলেই বোঝা যায় যেখানে-সেখানে শুধু-পায়ে এরা ছুটে বেড়ায়—জল কাদা কিছুই বাছে না। তাদের ডানার পালক, গাঁয়ের পালক, ল্যাজের পালকগুলো পরিষ্কার ঝকঝক করছে বটে কিন্তু ধরণ-ধারণ দেখলে বোঝা যায় এগুলো একেবারে বুনো আর জংলি! খোঁড়া তাড়াতাড়ি রিদয়কে সাবধান করে দিলে—যেন সে কে, কি বৃত্তান্ত, এসব কথা বুনো হাঁসদের না বলে। তার পর সে খোঁড়াতে-খোঁড়াতে এগিয়ে গেল। চকা-নিকোবর, খোঁড়াহাঁস আর বুনোহাঁসদের মধ্যে খানিক্ষণ ঘাড়-নেড়ে নমস্কার প্রতি-নমস্কার চলল। তারপর চকা শুধোলে—“এখন বল তো, তোমরা কে? কোন জাতের পাখি?”

 খোঁড়া আস্তে-আস্তে বললে—“কি আর পরিচয় দেব? গেল-বছর ফাগুন মাসে হরিংঘাটায় আমি ডিম-ভেঙে বার হই। জন্মাবধি পা-টি খোঁড়া। এই শীতে আমতলির হাটে আমি বিকোতে আসি; সেখান থেকে
৪২