পাতা:বুড়ো আংলা-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৪২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

“তুমি তো বেশ সাফ-সাফ জবাব দিলে—একটুও ভয় না করে! ভালো, ভালো, তোমার সাহস আছে—সময়ে লায়েক হতে পারবে—‘বুকের পাটা শক্ত, সকল কাজে পোক্ত’। দু’দিন এদলে থাক, দেখি তোমার হিম্মৎ কতটা, তারপর যা হয় বিবেচনা করা যাবে। কি বল?”

 খোঁড়া হাঁস মাথা নেড়ে বললে—“আমি তো তাই চাই। এতেই আমি খুশি!”

 এইবার চকা-নিকোবর বুড়ো-আংলা রিদয়ের দিকে ঠোঁট বাড়িয়ে বললে—“একি, এ কোন জানোয়ার? ভারি তো অদ্ভুত।”

 খোঁড়া হাঁস তাড়াতাড়ি বললে—“এটি আমার দেশের লোক, হাঁস চরাবার কাজ করে, সঙ্গে থাকলে কাজে লাগতে পারে।”

 চকা নাক তুলে উত্তর করলে—“বুনো হাঁসের কোনে কাজে লাগবে না।—পোষা হাঁসের কাজে লাগবে বটে! ওর নাম কি?”

 মানুষের নাম বললে পাছে বুনো হাঁসরা ভয় খায়, সেইজন্যে খোঁড়া হাঁস অনেক ভেবে বললে—“ওর নাম অনেকগুলো। আমরা ওকে ডাকি বুড়ো-আংলা বলে। আঃ, বড় ঘুম পাচ্ছে।” বলেই খোঁড়া দুবার হাই তুলে চোখ বুজলে; পাছে চকা আর-কিছু প্রশ্ন করে তাই খোঁড়া আগে থাকতেই সাবধান হচ্ছে—“মাগো, চোখ আপনা-হতেই ঢুলে আসছে! চল্‌রে বুড়ো-আংলা, ঘুমোবি চল।”

 চকা-নিকোবর বড় পাকা হাঁস; বুড়ো হয়ে তার মাথা থেকে ল্যাজের পালক পর্যন্ত রুপোর মতো শাদা হয়ে গেছে; মাথাটা যেন চূনের হাঁড়ি; পা-দুটো যেন চ্যালা-কাঠ—বাঁকা, ফাটা-চটা; ডানা-দুটো যেন দুখানা ঝরঝরে বাঁশের কুলো; ঠোট ভোঁতা; গলা ছিনে-পড়,; কিন্তু চোখ এখনো জোয়ান-হাঁসের চেয়েও ঝকঝকে—যেন আগুন ঠিকরে পড়ছে! চকা দেখলে খোঁড়া পাশ-কাটাবার চেষ্টায় আছে, সে এগিয়ে এসে
৪৪