কুকুর আবার চেঁচিয়ে বললে—“ঐ দেখ ওদিকে গাছ-ঘর, মালির ঘর; আর এই সব সুরকি-পাতা রাস্তার ধারে-ধারে পাথরের পরী, গ্যাস-লাইটের থাম, বাঁধা ঘাট, বারো-দোয়ারি নাটমন্দির। এসব কি চোখে পড়ছে না! যে বলছ ছপ্পড় কার? ছপ্পড়ে কখনো কেলিকানন, পুষ্পকানন, কামিনীকুঞ্জ থাকে? না, পাথরের পরী, ঘাটের সিঁড়ি থাকে? ঐ দেখ রাজার কাচারি, ঐ হাতিশাল, ঘোড়াশাল, তোষাখানা। এসব কি ছপ্পড়ে থাকে? না ছপ্পড় কখনো দেখেছ? ছপ্পড় দেখতে হয়তো ওপাড়ার ওই জমিদার-গুলোর বাড়ি দেখে এস। আমার মনিব কি জমিদার? এরা মুর্ধাভিষিক্ত। লেখাপড়ার ধার দিয়েও যায় না। ঘোড়া-রোগে এদের সবাই মরেছে। সেকালে এরা চীনের রাজা ছিল। এখনো দেখছ না ফটকে লেখা—‘পাল্দিং অফ মুড়িয়া!” এই ছপ্পড়ের নহবতখানার চুড়ো দশক্রোশ থেকে দেখা যায়—এমনি ছপ্পড় এটা!”
কানা কুকুরটা ঘেউ-ঘেউ করে থামলে হাঁসেরা হাসতে-হাসতে বললে—“আরে মুখ্যু, আমরা কি তোর রাজার কথা, না রাজ-বাড়ির কথা, না মাটির কেল্লার কথা শুধোচ্ছি? ওই ভাঙা ফটকের ধারে পোড়ো বাগানে ভাঙা মদের পিপেটা কার, তাই বল না!” এমনি রঙ-তামাশা করতে-করতে হাঁসেরা নুড়িয়া ছাড়িয়ে সুরেশ্বরে—যেখানে প্রকাণ্ড ঠাকুর-বাড়ির ধারে সত্যিকার বাগ-বাগিচা, দীঘি-পুষ্করিণী, ঘাট-মাঠ রয়েছে, সেইখানে কুশ-ঘাসের গোড়া খেতে নামল। ওদিকে মেঘনা, এদিকে পদ্মা—এই দুই নদী যেখানে মিলেছে, সেই কোণটিতে হলো সুরেশ্বর-মঠ। চারদিকে আম-বাগান, জাম-বাগান, ঠাকুর-বাড়ি, অতিথশালা, ভোগ-মন্দির, দোলমঞ্চ, আনন্দবাজার, রথতলা, নাট-মন্দির, রন্ধনশালা, ফুল-বাগান, গোহাল-গোষ্ঠ, পঞ্চবটী, তুলসীমঞ্চ, রাসমঞ্চ, রামকুণ্ডু, সীতাকুণ্ড, গোলকধাম, দেবদেবী-স্থান—এমনি একটা পরগনা জুড়ে প্রকাণ্ড ব্যাপার! এরি এক-কোণে
৬০