পাতা:বুড়ো আংলা-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৭৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ছোঁড়া আগুন জ্বেলে কচি ছেলের একজোড়া পশমের মোজা তাতিয়ে নিচ্ছে, আর সেই সঙ্গে নিজের হাত-পাগুলোও একটু সেঁকে নিচ্ছে, এমন সময় ঘর থেকে বাড়ির গিন্নি ডাক দিলেন—“টুকনী!”

 ছেলেটা তাড়াতাড়ি হাতের মোজা জোড়া মাটিতে ফেলে দৌড় দিলে, চকা অমনি ছোঁ দিয়ে মোজাটা নিয়ে রিদয়কে দিয়ে বললে—“পরে ফেল উলের জামা।” রিদয় মোজাটা মাথায় গলিয়ে ছেঁড়া মোজার তিনটে ছেঁদা দিয়ে হাত আর মাথা বার করে ফিট হয়ে যেন সোয়েটার পরে দাঁড়াল।

 হাঁসের দল তাকে পিঠে নিয়ে আকাশে উঠল—টুকনী ছোঁড়াটা নিচে দাড়িয়ে চেঁচাতে লাগল—“আরে-আরে হাঁস মোজা লেকে ভাগা!”

 রিদয় শুনলে গিন্নি চেঁচাচ্ছেন—“হাঁসে কখনো মোজা নেয়? নিশ্চয় মোজাটা পুড়িয়ে রেখে মিছে কথা বলছে! ফের ঝুটবাত বোলতা!”

 টুকনীর মোজা-পোড়ানোর মামলার শেষ কি হল দেখবার আর সময় হল না! মেঘ তখন মুষল ধারায় জল ঢালতে আরম্ভ করেছে, হাঁসেরা তাড়াতাড়ি মেঘ ছাড়িয়ে উঠতে চেষ্টা করতে লাগল আর বন-জঙ্গলকে ডেকে বলতে লাগল—“কত জল আর চাই বল, তেষ্টা যে মেটে না দেখি, মেটে না দেখি!” কিন্তু দেখতে-দেখতে আকাশ নীল মেঘে ছেয়ে গেল, সূর্য কোথায় কোনদিকে তার ঠিক নেই, হাঁসেদের ডানার উপরে বিষ্টি ক্রমাগত চাবুকের মতো পড়ছে, ডানার পালক ভিজে তাদের বুকের পালকে পর্যন্ত জল সেঁধিয়েছে, পাহাড়-পর্বত চড়াই-নাবাই গাছ-পালা ঘন কুয়াশায় ঝাপসা হয়ে মিলিয়ে গেছে—দু’হাত আগে নজর চলে না। পাখিদের গান থেমে গেছে। হাঁসেরা চলেছে, ধীরে-ধীরে পথ খুঁজে-খুঁজে; রিদয় কেবলি শীতে কাঁপছে আর ভাবছে, চুরি করার এই শাস্তি।

 এই মেঘ আর কুয়াশার মধ্যে দিয়ে চকা-নিকোবর যখন তাদের কটিকে নিয়ে সিংচল পাহাড়ের সিংএ একটা ঝাউতলায় এসে বলল, তখন

৭৯