পাতা:বুড়ো আংলা-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

আর বলতে থাকলেন—“ছেড়ে দে, ছেড়ে দে বলছি!” কিন্তু দাঁতে-শুঁড়ে-ঢোলকে-জালে এমনি জড়িয়ে গেছেন যে গণেশের নড়বার সাধ্যি নেই। তালের নুটির মতো জালের মধ্যে আটকা পড়ে গণেশ হাঁপাতে-হাঁপাতে মা-দুর্গাকে স্মরণ করতে লাগলেন; সেই সময় ইঁদুর অন্ধকারে আস্তে-আস্তে এসে কটাস-করে রিদয়ের পায়ে এমনি দাঁত বসিয়ে দিলে যে যন্ত্রণায় সে ছটফট করতে লাগল।

 রিদয় জাল ফেলে পায়ে হাত বুলোচ্ছে, এমন সময় গণেশ শুঁড়ে-দাঁতে জাল কেটে বেরিয়ে নিজমূর্তি ধরলেন:

 মার-মার ঘের-ঘার হান-হান হাঁকিছে,
 হুপ-হাপ দুপ-দাপ আশ-পাশ ঝাঁকিছে!
 অট্ট-অট্ট ঘট্ট-ঘট্ট ঘোর হাস হাসিছে,
 হুম-হাম খুম-খাম ভীম শব্দ ভাষিছে!
 উর্ধ্ববাহু যেন রাহু চন্দ্র সূর্য পাড়িছে,
 লম্ফ-ঝম্ফ ভূমিকম্প নাগ-দন্ত লাড়িছে!
 পাদ-ঘায় ঠায়-ঠায় জোড়া লাথি ছুটিছে,
 খণ্ড-খণ্ড লণ্ড-ভণ্ড বিস্ফুলিঙ্গ উঠিছে!
 হুল-থুল কুল-কুল ব্রহ্মডিম্ব ফুটিছে,
 ভস্মশেষ হৈল দেশ রেণু-রেণু উড়িছে!

 দেখতে-দেখতে চালে গিয়ে গণেশের মাথা ঠেকল। তিনি দাঁত কড়-মড় করে বললেন—“এতবড় আস্পর্ধা!—ব্রাহ্মণ আমি, আমার গায়ে চিংড়ি-মাছের জাল ছোঁয়ানো! যেমন ছোটলোক তুই, তেমনি ছোট বুড়ো-আংলা যক্‌ হয়ে থাক!” বলেই গণেশ শুঁড়ের ঝাপটায় রিদয়কে সাত-হাত দূরে ঠেলে ফেলে ভুস করে চণ্ডীমণ্ডপের চাল ফুঁড়ে অন্তর্ধান হলেন।


১০