পাতা:বুড়ো আংলা-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৮৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

আর শেওলা, একমাত্র চমরী গাই পাহাড়ি ছাগল আর ভেড়া, তার পরের ধাপে মানুষ-সমান ঘাস আর দেবদারু বন, সেখানে শেয়াল ভালুক হেঁড়েল এরাই যেতে পারে, তার পরের রকে নানা ফুল ফলের বাগান, সেখানে প্রজাপতি পাখি খরগোস কুকুর বেড়াল ভোঁদড় ভাম বাঁদর হনুমান এরাই থাকে, সবশেষের ধাপে বেতবন বাঁশবন অন্ধকার ঘন জঙ্গল, সেখানে হরিণ মোষ বাঘ সাপ ব্যাঙ্‌ তার পরে চাটালো জমি যার উপর দিয়ে সহস্রধারা নদী সব বয়ে চলেছে, এরি পরে অগাধ সমুদ্র, নীল জল, শেষ দেখা যায় না, এই সমুদ্রের ওধারে যে কি, তা কেউ জানে না!

 চকা আমনি বলে উঠল—“আমি জানি। নীল সমুদ্রের মাঝে পাহাড় আছে, টাপু আছে, তার পরে পৃথিবীর শেষ বরফের দেশ, সেখানে বারোমাস বরফ, জমি যেন শাদা চাদরে ঢাকা আর সেখানে ছ’মাস রাত্রি ছ’মাস দিন; সেখানে পেঙ্গু পাখিরা বরফের বাসায় ডিম পাড়ে, ধলা ভালুক আছে, ধলা শেয়াল সিন্ধুঘোটক আছে, সব সেখানে শাদা, কালো কিছু নেই, দিন রাত সমান আলো, ঘুটঘুটে আঁধার মোটেই নেই, আমি সেখানে পাঁচবার গেছি!”

 চকার কথায় রামছাগল শিং বেঁকিয়ে বল্লে—“এত বুড়ো হলেম এমন আজগুবি কথা তো শুনিনি।”

 রিদয় এবার এগিয়ে এসে বললে—“যে হিমালয়ের চূড়ো এখান থেকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে বরফে ঢাকা, ঐ হিমের বাড়ি গড়া নিয়ে কি কাণ্ড হয়ে গেছে এককালে, তার খবর চকা তো জানে না, রামছাগলও জানে না, মানুষেরা ধ্যান করে ওই নিচের তলাকার বনে বসে। ওই ধবলগিরির উপরের খবর যা শাস্তরে লিখে গেছে—তাই বলছি, শোনো। বড় চমৎকার কথা!”

 সবাই অমনি রিদয়কে ঘিরে বসল কথা শুনতে, মেঘলা দিন ভিজে

৮৭