ব্যবহারে জ্ঞানে মতে সাধনায় সেবায় কোথায়ও প্রাণহীন হইও না, তবে এই গলিত বিকারের প্রলয় হইতে রক্ষা পাইবে।
যাক্ সে কথা। মহাপুরুষেরা সত্যকে এই জীবন দেন বলিয়া সাধকমণ্ডলী যে তাঁহাদের কাছে কি উপকৃত তাহা বলিয়া শেষ করা যায় না। ঐতিহাসিক সেই সব মহাপুরুষকেও অন্যান্য মানুষের মত করিয়াই কি না, তাই স্থান কাল ঘটনা ও দেখেন নানাবিধ সীমার মধ্যে বদ্ধ করিয়াই তাহাদিগকে দেখেন; কিন্তু সাধক মহাপুরুষকে বাহিরের ইন্দ্রিয়লোকে রাখেন না তাঁহাকে একেবারে অন্তরলোকে লইয়া গিয়া “মনের মানুষ” করেন, তখন আর ত সীমার বা পরিমাণের বোধ থাকে না, তাই ভক্তদের হৃদয়ে মহাপুরুষগণ চিরদিনই সীমা অতিক্রম করিয়াই বিদ্যমান। খৃষ্ট ঐতিহাসিকের কাছে একজন মানুষ, পুণ্যবান্ সচ্চরিত্র হইলেও একজন মানুষ মাত্র কিন্তু খৃষ্টীয় সাধকের কাছে তিনি প্রেমলোক-বিহারী মনের মানুষ অতএব আর তাঁহাকে স্থানকাল ঘটনার সীমার মধ্যে রক্ষা করা চলিল না।
কত মানব জগতে আছে কিন্তু আমার গৃহে যখন একটি মানব শিশু জন্মলাভ করে তখন ধূপ ধুনা শঙ্খ ঘণ্টারবের মঙ্গলাচারে তাহাকে গৃহে গ্রহণ করি। জীর্ণচীর দরিদ্র যেদিন বিবাহে চলে সেদিন তার রাজসজ্জা, রাজাও তাহার জন্য পথ ছাড়িয়া দেন আজ যে সে প্রেমলোকে প্রবেশ করিবে, আজ সে রাজারও বড়। মহাপুরুষ আমার অন্তরের প্রেমলোকে আসিবেন কি প্রতিদিনেরই জীর্ণচীর পরিয়া? কণ্টকক্ষত চরণে, রৌদ্রবদনে, ক্ষুৎক্ষামদেহে? না, তিনি আসিবেন রাজার ন্যায় সমারোহে জয়বাদ্য বাজাইয়া, সর্ব্বৈশ্বর্য্যে মণ্ডিত হইয়া।