বুদ্ধের জীবন ও বাণী
অনুসরণ করিয়া জীবনের সুখসম্ভোগ ত্যাগ করিও না। সন্ন্যাস-গ্রহণ-ইচ্ছা পরিত্যাগ করিয়া গৃহেই বাস কর।”
যে মহাভাবের আবেশে সিদ্ধার্থ আবিষ্ট হইয়াছেন, সার্থকতার যে ভাবী আশায় তাঁহার হৃদয় বল লাভ করিয়াছে, বিষয়ী শুদ্ধোদন তাহা কেমন করিয়া বুঝিবেন? সিদ্ধার্থ অবিচলিতভাবে সবিনয়ে বলিলেন, “পিতঃ, মৃত্যু আসিয়া একদিন আমাদের বিচ্ছেদ ঘটাইবেই—সুতরাং আমার সাধনার পথে আপনি বাধা উপস্থিত করিবেন না। যে ঘরে আগুন লাগে সে ঘর পরিত্যাগ করাই শ্রেয়ঃ, সংসার ত্যাগ করা ভিন্ন আমার শ্রেয়োলাভের দ্বিতীয় উপায় নাই।”
পিতার চরণে প্রণাম করিয়া সিদ্ধার্থ চলিয়া আসিলেন। হতাশ হৃদয়ে শুদ্ধোদন গৃহত্যাগে বাধা জন্মাইবার নিমিত্ত প্রহরী নিযুক্ত করিলেন।
জীবের প্রতি অপার করুণায় সিদ্ধার্থের হৃদয় কানায় কানায় ভরিয়া উঠিয়াছে। সেই মহাদুঃখ-পূর্ণ হৃদয় লইয়া তিনি অন্তঃপুরে প্রবেশ করিলেন। সুন্দরী নর্ত্তকীদের নৃত্যগীত তাঁহার ভাল লাগিল না। তিনি মৌনী হইয়া রহিলেন। সাধ্বী গোপা স্বামীর এরূপ ভাব দেখিয়া উৎকণ্ঠিতভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন “প্রিয়তম, আজ তোমাকে এত বিষণ্ণ দেখিতেছি কেন? কি হইয়াছে আমাকে প্রকাশ করিয়া বল।”
সিদ্ধার্থ উত্তর করিলেন—“প্রিয়ে, তোমাকে দেখিয়া আজ আমি যে আনন্দলাভ করিতেছি, তাহাই আমাকে পীড়িত করিতেছে। আমি স্পষ্টই বুঝিয়াছি এই আনন্দ ক্ষণস্থায়ী। জরা, ব্যাধি ও মৃত্যু আমাদের আনন্দভোগের পথে চির বাধা হইয়া রহিয়াছে।”