পাতা:বুদ্ধের জীবন ও বাণী.djvu/৫০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সাধনা ও বোধিলাভ

মন হইতে বাসনার শর তুলিয়া ফেলিবার জন্য অনলস হইয়া কৃচ্ছ্রসাধনায় প্রবৃত্ত হইলেন। তাঁহার সাধু চেষ্টা ও চিত্তের দৃঢ়তা দেখিয়া পঞ্চশিষ্য বিস্মিত হইলেন। কঠোর যোগী বলিয়া সিদ্ধার্থের খ্যাতি দেশদেশান্তরে পরিব্যাপ্ত হইল। তিনি দেহের দিকে কিছুমাত্র ভ্রূক্ষেপ না করিয়া যোগাসনে উপবিষ্ট হইয়া সর্ব্বজীবের দুঃখ দূর করিবার জন্য মনন ও ধ্যান করিতে লাগিলেন। জন্মমৃত্যুর সমুদ্র অতিক্রম করিয়া নির্ব্বাণলাভের জন্য তিনি কঠোর যোগ দ্বারা দেহ ও মনকে সংযত করিতে লাগিলেন। আহারের মাত্রা হ্রাস প্রাপ্ত হইতে২ একটিমাত্র তণ্ডুলকণায় আসিয়া দাঁড়াইয়াছিল! একদিন নয়, দুই দিন নয়, এক মাস নয়, দুই মাস নয়, সুদীর্ঘ ছয় বৎসরকাল এইপ্রকার কঠোর সাধনা চলিতেছিল। কত রৌদ্র, কত বৃষ্টি, কত শীত, কত গ্রীষ্ম, তাঁহার মাথার উপর দিয়া চলিয়া গিয়াছিল, সিদ্ধার্থ তাহা জানিতেও পারেন নাই। তাঁহার দেহের দিব্যকান্তি বিলুপ্ত হইল, দৃঢ় বলিষ্ঠ বিশালবপু কঙ্কালে পরিণত হইল।

 কিন্তু এত ক্লেশ ও এত যাতনা স্বীকার করিয়াও সিদ্ধার্থ তাঁহার চিরবাঞ্ছিত বোধিলাভ করিতে পারিলেন না। তাঁহার চিত্তের ব্যাকুলতা কিছুতেই দূর হইল না। তিনি পরিশেষে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইলেন যে, কৃচ্ছ্রসাধনা দ্বারা বাসনার অগ্নি নির্ব্বাপিত হইতে পারে না, এবং ইহাদ্বারা সত্যের বিমল আলোক লাভের আশাও দুরাশামাত্র। একদা একটি জম্বুতরুতলে উপবিষ্ট হইয়া সিদ্ধার্থ তাঁহার মনের অবস্থা এবং কৃচ্ছসাধনার ফলাফল-বিচারে প্রবৃত্ত হইলেন। তিনি ভাবিলেন—“আমার দেহ ক্ষীণ ক্ষীণতর হইয়াছে; উপবাস দ্বারা আমি কঙ্কালে পরিণত হইলাম, কিন্তু

২৩