পাতা:বুদ্ধের জীবন ও বাণী.djvu/৫৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বুদ্ধের জীবন ও বাণী

মধুর কণ্ঠে সুজাতাকে কহিলেন—“ভদ্রে, আমি দেবতা নই, তোমারই মত মানুষ, তোমার মঙ্গল হস্তের মহৎ দান আজ আমার প্রাণরক্ষা করিল, মনে নবীন উৎসাহের সঞ্চার করিয়া দিল। আমি যে সত্যের সন্ধ্যানে রাজ্যমুখ ছাড়িয়া সন্ন্যাসী হইয়াছি, তোমার এই অন্ন সেই সত্যলাভের সহায় হইল। আমার মনে আজ দৃঢ় ধারণা হইয়াছে যে, আমি সেই সত্যলাভ করিয়া কৃতার্থ হইতে পারিব। তোমার কল্যাণ হউক।”

 এই ঘটনার পরে সিদ্ধার্থ নিয়মিত পানাহারে প্রবৃত্ত হইলেন। তাঁহার এই পরিবর্ত্তন পঞ্চ শিষ্যের মনে গভীর সন্দেহের সঞ্চার করিল। তাঁহারা ভাবিলেন, সিদ্ধার্থ তাঁহার জীবনের মহৎ উদ্দেশ্য বিস্মৃত হইয়া সাধনার সত্য পথ হইতে দূরে সরিয়া যাইতেছেন। এতদিন তাঁহারা যাঁহাকে গুরু বলিয়া মানিয়াছেন, এখন তাঁহারা তাঁহাকে ত্যাগ করিয়া চলিলেন। বিমুখ শিষ্যদের এই শ্রদ্ধাহীনতা সিদ্ধার্থকে পীড়িত করিল; অন্তরের সেই বেদনা ঝাড়িয়া ফেলিয়া তিনি প্রশান্তচিত্তে একাকী মহাসাধনায় প্রবৃত্ত হইবার জন্য প্রস্তুত হইলেন।

 নৈরাশ্যের মেঘ কাটিয়া যাওয়ায় সিদ্ধার্থের চিত্ত আনন্দে ভরিয়া উঠিল। তাঁহার হৃদয়ের আনন্দে বিশ্বপ্রকৃতি প্রসন্নমূর্ত্তি ধারণ করিল। তিনি যখন মৃদুলগমনে বোধিদ্রুমের দিকে অগ্রসর হইতেছিলেন, তখন তাঁহারই আনন্দপুলকে পদতলে ধরিত্রী যেন শিহরিয়া উঠিতেছিলেন। আপনার মহাসাধনার সফলতাসম্বন্ধে সন্দেহের শেষ রেখাটুকুপর্য্যন্ত যখন নিঃশেষে দূর হইল, তখন সিদ্ধার্থ অন্তর ও বাহির হইতে ক্রমাগত আশার বাণী শুনিতে লাগিলেন।

২৬