পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৃহৎ বঙ্গ بیده যাইবার পূর্বে তিনি সনাতনের “সাকর মল্লিক” নাম ঘুচাইয়া তাহার “সনাতন” নাম দিয়া গেলেন এবং “দাবির খাসি”কেও “রূপ” নামে পরিচিত করাইলেন। চৈতন্য বলিয়া গেলেন, যেন পুরীতে ইহারা তাহার সহিত সাক্ষাৎ করেন ! গৌড়ে ফিরিয়া সেই রাত্রে রূপ রাজকাৰ্য্যাবসানে স্বগৃহে শয়ন করিয়াছেন। মধ্যরাত্রে তঁাহার পায়ে একটা বিষাক্ত কীট দংশন করে। তিনি তাহার স্ত্রীকে জাগাইয়া একটা আলো জালিতে বলেন ; বাস্তভাবে স্ত্রী জাগিয়া উঠিয়া অন্ধকারে মোমবাতি হাতের কাছে না পাইয়া রূপের বহুমূল্য একটা পরিচ্ছদের মধ্যে আগুন ধরাইয়া ফেলেন। রূপ বলিলেন, “তুমি আমার এত দামের পোষাকটা নষ্ট করিলে ?” স্ত্রী বলিলেন, “তোমার ইষ্ট ও সুখস্বাচ্ছন্দ্যের কথা যেখানে, সেখানে এই ঘরবাড়ী, বহুমূল্য পোষাক আমার কাছে অতি তুচ্ছ কথা।” রূপ মনে ভাবিলেন, “ইহাব প্রভুর সেবা ত এ সৰ্ব্বস্ব দিয়া করিতে প্ৰস্তুত!! আমার প্রভুর সেবার জন্য আমি কি করিযাছি বা করিতেছি ? আমি তো ঘববাড়ী-বিষয় লইয়াই আছি।” চৈতন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিবার পর তাহার হৃদয়ে স্বর্ণীক্ষরে যে স্বৰ্গীয় প্রেমের চিঠি লিখিত হইয়াছিল, এই তুচ্ছ ঘটনায় তাহার বাৰ্ত্তা উজ্জল হইয় তাহার মনে পৌছিল। তিনি সেই রাত্ৰেই গৃহত্যাগ করিয়া সন্ন্যাসী হইলেন। যাইবাব পূর্বে র্তাহার বিপুল বিষয়েব এক-চতুর্থাংশ ব্ৰাহ্মণদিগকে, এক-চতুর্থাংশ দুঃখিদরিদ্রদিগকে, অপর দুই অংশের একাংশ পরিবারবর্গকে এবং অপরাংশ সনাতনকে লিখিয়া দিলেন ; সঙ্গে একটুকরা কাগজে একটি শ্লোক সনাতনকে লিখিয়া গেলেন তাহ সর্বত্র পবিচিত ; প্রথম ছত্রটি এইরূপ “ যদুপতেঃ কু গত মথুরাপুরী, রঘুপতেঃ কৃ, গাতত্তরকৌশল।” রূপ পুৱী আসিয়া চৈতন্তেব সঙ্গে দেখা করিলেন- রূপ সংস্কৃতে যে দুইখানি নাটক লিখিতেছিলেন, তাম্বার সম্বন্ধে চৈতন্যের সঙ্গে কথাবার্তা হইল ; রূপ একই নাটকে শ্ৰীকৃষ্ণেব বৃন্দাবনলীলা ও মথুরার কাহিনী লিখিতেছিলেন। চৈতন্য ঐশ্বৰ্য্যের সঙ্গে মাধুৰ্য্য জড়াইতে নিষেধ করিয়া রূপের পরিকল্পিত উপাদানে দুইখানি নাটক লিখিতে উপদেশ দিলেন । তাহার ফলে আমরা বিদগ্ধমাধব ও ললিতমাধব-মধ্যযুগের সংস্কৃত-সাহিত্যের কোহিনুবিসদৃশ এই দুইখানি নাটক পাইয়াছি। ঐশ্বৰ্য্য হইতে মাধুৰ্য্য বিচুত হইবার পর হইতে কৃষ্ণলীলাব এক নবভাব আবিষ্কৃত হইয়াছে, বঙ্গদেশ ভিন্ন আর কোথায়ও সেই রস প্ৰগাঢ়ভাবে আস্বাদিত হয় নাই। রূপ আরও অনেকগুলি সংস্কৃত কাব্য রচনা করেন, তন্মধ্যে দানকেলীকৌমুদী প্ৰভৃতি শ্ৰেষ্ঠ । বৃন্দাবনে ইনি যে ভাবে জীবনযাপন করেন, তাহা সন্ন্যাসীর আদর্শ জীবন } সনাতন রূপের চিঠিটুকু লইয়া ভাবিতে লাগিলেন, তাহাবও মন হইতে বিষয়তৃষ্ণা দূব হইয়াছিল। চৈতন্যের দর্শনাবধি তিনিও বর্ষণোদ্যত মেঘের ন্যায় কোন সুযোগের সঙ্কল্প লইয়া রাজসভায় প্ৰতীক্ষা করিতে লাগিলেন । রাজকাৰ্য্যে মন নাই, ক্রমে কয়েক দিন রাজসভায় উপস্থিত হন না। রাজার মনে সন্দেহ হইল, হয়ত রূপের মত ইনিও পালাইবার চেষ্টা করিতেছেন। রাজা তাহাকে ডাকাইয়া তাহার সঙ্গে কোন শত্রুর বিরুদ্ধে অভিযান করিবার জন্য প্ৰস্তুত হইতে বলিলেন ; সনাতন স্পষ্টাক্ষবে বলিলেন, “আপনি হয়ত কোন দেবমন্দির ভাঙ্গিবোন--হিন্দুর ধৰ্ম্মে হামা দিবেন, এমন কাৰ্য্যের জন্য আমার সহায়তা চাহিবেন না ।