পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৌরাঙ্গ ও তঁাহার পরিকরবর্গ ԳRֆ গোপাল ভট্টের নামে চলিয়াছিল। কিন্তু চৈতন্য-চরিতামৃতের লেখক এবং জীব গোস্বামী তঁহাদের গ্রন্থে এই পুস্তকের রচনাসম্বন্ধে সকল কথা লিখিয়া জানাইয়াছেন। সনাতন বৃন্দাবনের প্রকৃত উদ্ধারকর্তা। রূপ ও সনাতনের দুশ্চর তপস্যা সে অঞ্চলে সৰ্ব্বজনবিদিত, ভক্তমাল গ্রন্থে তাহা উল্লিখিত আছে। সম্রাট আকবর সনাতনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়া মুগ্ধ হইয়াছিলেন, এবং মহারাজ মানসিংহ বহুব্যয়ে বৃন্দাবনে গোবিন্দজীর যে মন্দির স্থাপন করেন, তৎসংলগ্ন প্ৰস্তরফলকে লিখিত আছে যে, ভক্ত রাজা তাহার গুরু রূপ ও সনাতনের আদেশে ঐ মন্দির রচনা করেন। রামদাস কাপুরি নামক বণিকের জাহাজ নদীর চড়ায় আটকাইয়া যায়, তিনি সনাতনের বিগ্ৰহ মদনমোহনের নিকট মানত করেন-জাহাজের উদ্ধার হইলে তিনি একলক্ষ টাকা ব্যয়ে বৃন্দাবনে উক্ত বিগ্রহের মন্দির স্থাপন করিবেন। বণিকের প্রতিশ্রুত অর্থে বিগ্রহের জন্য মন্দির নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল। এই দুইজন নগ্নদেহ সন্ন্যাসীর কৃপায় বৃন্দাবনের লুপ্ত তীর্থের উদ্ধার হয় এবং উহা শত সৌধমালায় বিভূষিত হয়। চৈতন্য-চরিতামৃত-কার লিখিয়াছেন, দুই ভ্ৰাতাব থাকিবার কোন নিদিষ্ট স্থান ছিল না ! পাছে কোন স্থানবিশেষের প্রতি আসক্তি জন্মে, এইজন্য “একৈক বৃক্ষের নীচে” এক রাত্ৰি শয়ন করিতেন, কৌপীন ও কম্বলমাত্র সম্বল ছিল, মুষ্টিভিক্ষ যথেষ্ট ছিল এবং দিনরাত্র কৃষ্ণনাম-কীৰ্ত্তন ও তৎসঙ্গে নৰ্ত্তন করিতেন। সনাতনরচিত বহু সংস্কৃত গ্ৰন্থ আছে। রাজপুতনার অনেক বাজা সনাতনের শিষ্য হইয়াছিলেন, সে অঞ্চলে তঁহার সম্বন্ধে অনেক প্ৰবাদ আছে । ভক্তমালে লিখিত আছে তিনি একটা পরশপাথর পাইয়া তাহা অস্পৃশ্য বলিয়া যমুনার জলে ফেলিয়া দিয়াছিলেন, সম্রাট আকবর যমুনার জলে হাতী নামাইয়া তাহার খোজ করিয়াছিলেন ( গ্ৰাউসের মথুরার ইতিহাস দ্রষ্টব্য )। উত্তরকালে রূপ ও সনাতনের ভ্রাতুষ্পপুত্র জীব গোস্বামী বৃন্দাবনে বৈষ্ণব-সমাজের কর্ণধার হইয়াছিলেন। ষোড়শ শতাব্দীতে সপ্তগ্রাম বাঙ্গলার সর্বপ্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল। অতি প্রাচীন কালেও ইহার খ্যাতি যুরোপ পৰ্য্যন্ত প্রচারিত ছিল। রোমানদিগের “গ্যাঞ্জা রিডিয়া” বোধ হয় এই সপ্তগ্রাম-অঞ্চল, সরস্বতী নদী শুকাইয়া যাওয়াতে এই নগর ধবংস পাইয়াছে। পুরাকালে কিনোজের কোন রাজার সাত পুত্রের নামে এই গ্রামের নাম সপ্তগ্রাম হইয়াছিল বলিয়া প্ৰবাদ । গৌড়ের পাঠান রাজার অধীন এক শাসনকর্তা সপ্তগ্রাম শাসন করিতেন। কিন্তু এই বাণিজ্যকেন্দ্ৰেব বিপুল আয় থাকার দরুন শাসনকৰ্ত্তারা প্ৰায়ই প্ৰবল হইয়া গৌড়ের বিদ্রোহী হইতেন । এইজন্য বাদশাহ শাসনকর্তা উঠাইয়া দিয়া সপ্তগ্রাম জমিদারীর মত হিরণ্য ও গোবৰ্দ্ধন নামক দুই ভ্ৰাতাকে ইজারা দিয়াছিলেন । দুই ভ্ৰাতাকে গৌড়ে বাৎসরিক ৮ লক্ষ টাকা রাজস্ব দিতে হইত, ইহা ছাড়াও এই সম্পত্তির আয় অতি বিপুল ছিল। জাহাজের উপর ষে কর স্থাপিত হইত। তাহাও একটা বড় রকমের আয়ের পথ হইয়াছিল! রাজস্ব ছাড়াও দুই ভ্ৰাতা প্ৰায় ১২ লক্ষ টাকা বৎসরে নিজেরা পাইতেন। ষোড়শ শতাব্দীতে বারলক্ষ টাকা একটা সামান্য কথা ছিল না। হিরণ্যের কোন সন্তান ছিল না, গোবৰ্দ্ধনের পুত্র কনস্যুনাখাই এই বিশাল সম্পত্তির একমাত্র বৃহৎ বঙ্গ/৫১ রঘুনাথ দাস।