পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৃহৎ বঙ্গ و \ه দুইবৎসর কাল দাক্ষিণাত্যে ঘুরিয়া পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে ভ্রমণবৃত্তান্ত লিখিয়া গিয়াছেন এবং খুব সম্ভব যিনি “শ্ৰীগোবিন্দ” নামে উত্তরকালে চৈতন্যের রাত্ৰিদিনের সঙ্গী হইয়া পুৱীতে দিন যাপন করিয়াছেন; ইহার নাম বিশেষভাবে উল্লেখ-যোগ্য। র্তাহার স্ত্রীর নাম শশিমুখী ছিল এবং তিনি স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করিয়া স্বীয় আবাসপল্লী কাঞ্চননগর পরিত্যাগপূর্বক সন্ন্যাস গ্রহণ করিয়া চৈতন্যের চিরসার্থী হইয়াছিলেন । কঁচড়াপাড়ার মহা ধনাঢ্য ও পণ্ডিত শিবানন্দ সেনািনকে মহাপ্ৰভু পিতার ন্যায় মান্য করিতেন, তাহার পুত্ৰ বিখ্যাত পৱমানন্দ সেনান, যিনি “কবিকর্ণপুর” নামে বৈষ্ণব জগতে সুপরিচিত এবং র্যাহার রচিত চৈতন্য-চন্দ্ৰোদয়, চৈতন্যচরিতামৃত কাব্য চৈতন্যসম্বন্ধে আদি গ্ৰন্থসমূহের অন্যতম। মুৱাব্রিগুপ্ত—যাহার আদি নিবাস ছিল শ্ৰীহট্ট-এবং র্যাহার কবিত্ব ও পাণ্ডিত্য এক সময়ে নবদ্বীপের গৌবব ছিল। ইহাব বচিত চৈতন্যের জীবনীতে সন্ন্যাসগ্রহণের পূৰ্ব্বপৰ্য্যন্ত ঘটনাগুলি বিবৃত হইয়াছে। কবিকর্ণপূব ও মুরারিগুপ্ত উভয়েই সংস্কৃতে গ্ৰন্থ লিখিয়াছিলেন, মুরাবিগুপ্তের কতকগুলি বাঙ্গলা পদ আছে। চট্টগ্রামবাসী পুণ্ডৱীক বিদ্যানিধি—ইনি ভোগেব বাহাব্বরণের আড়ালে নিবিড় কৃষ্ণানুবাগ এবং সংসাবেব প্ৰতি বিবাগ বহন কবিতেন। চৈতন্য ইহাকে পিতৃ-সম্বোধন করিতেন । বাসুদেব সনানািবভৌম—যিনি পণ্ডিতদের শিবোমণি ছিলেন,-পূবীতে যেদিন চৈতন্তেব নিকট ইহার বিচাবে পরাজয় হয় সেদিন বাঙ্গলা ও উডিষ্যার সমস্ত পণ্ডিতমণ্ডলী তরুণ চৈতন্তেব নিকট বিস্ময়ে ও ভক্তিতে আত্মসমৰ্পণ করিয়াছিলেন । যে সাৰ্ব্বভৌম অল্পবয়স্ক চৈতন্যকে দেখিয়া বলিয়াছিলেন, “তুমি সন্ন্যাসের যোগ্য নহ, আমাৰ শাস্ত্রব্যাখ্যা শুন, তারপব তুমি তোমার বর্তমান কৰ্ত্তব্য বুঝিবে,”—সেদিন তিনি কি জানিতেন এই তরুণবয়স্ক যুবক জ্বলন্ত অগ্নিস্ফুলিঙ্গতুল্য চৈতন্তের ভক্তিব্যাখ্যান্য ও কৃষ্ণানন্দে বিহ্বলতা-দর্শনে পবাস্ত ও বিমুগ্ধ হইয়া স্তোত্ররচনাপূৰ্ব্বক তাহার স্তুতিপাঠ করিবেন? প্রবাদ চৈতন্য র্তাহাকে ষড়ভুজ দেখাইয়াছিলেন। দুই হস্তে রামজন্মের ধনুৰ্ব্বাণ, অপব এক হস্তে কৃষ্ণজন্মের বঁাশী, এবং অপর দুইহস্তে বৰ্ত্তমান জন্মের করঙ্গ ও কমণ্ডলু। বাসুদেব সার্বভৌম চৈতন্যের এতটা অনুরক্ত হইয়াছিলেন যে তঁহার আদর্শনে অস্থির হইয়া পড়িতেন—“শিবে বাজ পড়ে যদি পুত্ৰ মরি যায়, প্রভুর বিরহবাণ সহ নাহি যায়।” কাশীর প্রকাশণানন্দ সনৰৱ সুলতী এই ভাবেই চৈতন্যের ভক্তদের খাতায্য তাহার নাম লিখাইয়াছিলেন, ইনি ছিলেন কাশীর দণ্ডিসন্ন্যাসীদের নেতা। প্রথমতঃ চৈতন্যের ভাব-বিহবলতা দেখিয়া তিনি কতই না ঠাট্টাবিদ্রুপ করিয়াছিলেন । তাহার শাস্ত্ৰজ্ঞান কি থাকিতে পারে—সে এক তরুণ যুবক : চৈতন্য এই সকল গালাগালি শুনিয়া প্ৰথমবার চলিয়া গেলেন। কিন্তু দ্বিতীয় বার প্রকাশানন্দের সহিত তাহার বিচার হইল । এই ভক্তি-ধৰ্ম্ম সে যুগের পরম বিস্ময়ের কথা। তখন একদিকে মুসলমানেরা হিন্দুর মন্দির ও বিগ্ৰহাদি ভঙ্গ করিতেছিল, অপরদিকে পল্লীর ছায়ায় বসিয়া ব্ৰাহ্মণগণ বেদবেদান্তেম চৰ্চা করিতেছিলেন,—এই সময়ে রঘুনাথ শিরোমণি ন্যায়শাস্ত্রকে অতি সূক্ষ্মবিচার-পারদর্শী পণ্ডিতগণের বােধগম্য করিয়া চিন্তাশীলতার এরূপ উত্তঙ্গ সৌধ নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন, যাহাতে সমস্ত