পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳՋԵ։ বৃহৎ বঙ্গ মধুর হরিনামে আর্দ্র করিয়াও “হরিভক্তি-বিলাসে’র সর্বাংশে শাস্ত্রকে ভিত্তি করিয়াছিলেন। চৈতন্য ভিন্ন অন্য কেহ এই অসাধারণ কাজ সম্পাদন করিতে পারিতেন না, তিনি ছিলেন একদিকে চিন্তাজগতের অপরদিকে চোখের জলের রাজা-তিনি ১৩১৪টি ভাষা জানিতেন । অল্পবয়সে তিনি গঙ্গাদাস পণ্ডিতের টোলে প্ৰাকৃত ও পালিভাষা পড়িয়াছিলেন ( গৌড়পদতরঙ্গিণী ), দক্ষিণাত্যে ভ্ৰমণকালে ইহার অনেক বৌদ্ধ পণ্ডিতের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কের উল্লেখ আছে, পালিভাষা স্বয়ং শিখিয়া তিনি বৌদ্ধধৰ্ম্মের মৰ্ম্মাভিজ্ঞ হইয়াছিলেন । উড়িষ্যায় ১৮ বৎসর থাকিয়া ইনি সেই ভাষা খুব ভাল করিয়া শিখিয়াছিলেন, তিনি উড়িয়া ভাষায় বৈষ্ণবপদ প্রায়ই আবৃত্তি কবিতেন, “জগন্নাথ প্ৰভু পরিমুণ্ডাহু”- প্রভৃতি উড়িয়া পদ তিনি সর্বদা আবৃত্তি করিতেন; অনেক উড়িয়া কবি তাহার অন্তরঙ্গ সহচর ছিলেন । তেলেগু ও মালাযালাম ভাষায় তিনি অনর্গল কথা বলিতে পারিতেন । নারোজি দসু্যর ভাষা ছিল-মালায়ালাম, তাহার অনুচরেরা চৈতন্যদেবের সঙ্গে কথা কহিয়াছিল, এসম্বন্ধে গোবিন্দদাস লিখিয়াছেন :-“একজন লোক আসি কাই মাই করি । কি কহিল আমি বুঝিতে না পারি। তার বাক্য বুলি সব প্ৰভু সমঝিয়ে। কাই মাই বলি তারে দিলেন বুঝায়ে।” তামিল সম্বন্ধে এই উল্লেখ আছে-“কখনও তামিল বুলি বলে গোর রায় । কীভূ বা সংস্কৃত বলি লোকেরে বুঝায় ॥”-এই ব্যাপারে কোন অলৌকিকত্বেব অবকাশ গোবিন্দদাস রাখেন নাই ; তিনি স্পষ্ট করিয়া বলিয়াছেন-“এই দেশে ভ্ৰমি দীর্ঘকাল । সকলের ভাষা বুঝে শচীর দুলাল।” তাহার সময়ে বিদ্যাপতির মৈথিল পদের উপর বাঙ্গলার প্রভাব পড়ে নাই-বিদ্যাপতির পদ তখন খাস, মৈথিলী ছিল । চৈতন্য দিনরাত্র চণ্ডীদাস ও বিদ্যাপতিব পদ গান করিতেন। ( চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি, রায়ের নাটকগীতি, কর্ণামৃত শ্ৰীগীতগোবিন্দ। স্বরূপরামানন্দ সনে, মহাপ্ৰভু রাত্ৰি দিন, গায শোনে , পৰম আনন্দ ৷” (চৈ. চি. )। বৃন্দাবনে তিনি ছয়টি বৎসর ছিলেন, হিন্দী তখনকার দিনের আর্য্যাবৰ্ত্তের সর্বজন দিত ভাষা ছিল। সেই হিন্দীর অন্যতম কেন্দ মথুরা ও বৃন্দাবনে ক্ৰমাগত ছয় বৎসর থাকিয়া তিনি অবশ্য হিন্দী ভাষা জানিতেন। পাঠান বিজলী খায়ের সঙ্গে চৈতন্যের মুসলমান ধৰ্ম্মসম্বন্ধে অনেক তর্ক-বিতর্ক হইয়াছিল, বিজলী খা আরব ও পারশ্য দেশীয় শাস্ত্রে একজন বিশিষ্ট পণ্ডিত ছিলেন। চৈতন্য-চরিতামৃতে চৈতন্যের মুসলমান পণ্ডিতদের সঙ্গে যে বিচারের আভাস আছে, তাহাতে মনে হয় পােরশী ও আরবী ভাষার মোটামুটি জ্ঞান ऊँीश्द्ध छिल । সুতরাং দেখা যাইতেছে চৈতন্য আরবী, পারশী, বাঙ্গল, সংস্কৃত, পালি, প্ৰাকৃত, হিন্দী, উড়িয়া, মৈথিল, তামিল, তেলেগু, মালায়ালাম-অন্ততঃ এই সকল ভাষা ভালরূপ জানিতেন। ইহা ছাড়া তিনি তঁহাদের পরিবারের নিবাসভূমিতে যাতায়াত করিতেন। আসামী ভাষার সঙ্গে তাঙ্গার পরিচয় থাকিবার কথা । নানা প্রদেশে হরিনাম ও প্ৰেমধৰ্ম্মপ্রচারের জন্য তঁহাকে এই সকল ভাষা শিখিতে হইয়াছিল। ভাষা-শিক্ষায় তাহার অসাধারণ श्काड छिद्ध ।