পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৃহৎ বঙ্গ وار) বৈষ্ণব-সমাজের উপর –সমস্ত বাঙ্গলা দেশটার উপর-চৈতন্তের যে প্রভাব তাহার তুলনা নাই। নিত্যানন্দ পুরীতে আসিলেই চৈতন্য সঙ্গোপনে এক প্রকোষ্ঠে বসিয়া তাঁহাকে সমাজংশোধনের উপদেশ দিতেন. (চৈ, ভা, ) । তিনি জানিতেন নিত্যানন্দের ন্যায় সৰ্ব্বজাতির প্রতি সমদর্শী, উদারহৃদয় ব্যক্তি ব্ৰাহ্মণসমাজে আর দ্বিতীয়টি নাই। এই জন্য জাতিভেদের উৎকট বৈষম্য দূর করিয়া উদার বৈষ্ণবসমাজের দ্বার উন্মুক্ত করিবার ভাব তিনি নিত্যানন্দের উপর দিয়াছিলেন। নিত্যানন্দ ও তাহার পুত্র বীরভদ্র খড়দহে বসিয়া পতিতদিগকে যে স্নেহ-মধুর আহবান করিয়াছিলেন, তাহার ফলে ১২০০ নেড়া (মুণ্ডিতমস্তক বৌদ্ধ ভিক্ষুক } ও ১৩০০ নেড়ী (উক্তৰূপ বৌদ্ধ ভিক্ষুণী ) সাগ্রহে আসিয়া বৈষ্ণবধৰ্ম্ম আশ্রয় করিয়াছিল। এইভাবে রামকলী নগরে আর এক বৃহৎ নেড়ানেড়ী সম্প্রদায় ভেকাশ্রিত হইয়া বৈষ্ণব বৈরাগী সাজিয়াছিল। বহু বৌদ্ধ মুসলমান হইয়া গিয়াছিল, কিন্তু নিত্যানন্দের প্রসারিত-ভুজাশিত হইয়া বৌদ্ধ-জনসাধারণ সাধাবণ বৈষ্ণবমত অবলম্বন করিয়া হিন্দুসমাজের গণ্ডীতে স্থান লাভ করিয়া কৃতাৰ্থ হইয়াছিল। বৌদ্ধআখড়ায় বিবাহ প্ৰথা ছিল না। ব্যভিচার-দুষ্ট নেড়ানোড়া সমাজ তাহদের নেতৃদলের সঙ্গে সম্বন্ধচুত হইয়া বিলাসের স্রোতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত অবস্থায় ঘূণার্থ হইয়াছিল, তাহদের সন্তানসন্ততি নাম-গোত্ৰহীন হইয়া অতি হেয় অবস্থায় ছিল,--নিত্যানন্দ ইহাদের মধ্যে বিবাহ প্ৰথা প্ৰচলন করিয়া সমাজে ইহাদের একটা স্থান করিয়া দিয়াছিলেন । বৈরাগীবা কখনই ভেকাশ্ৰয়ের পূর্বে তাহারা কোন জাতীয় ছিল তাহ বলিবে না। এই ভাবে তাহদের পূৰ্ব্বজীবনের কলঙ্কিত অধ্যায় সম্পূর্ণরূপে বিস্মৃতিব জলে বিসর্জন দিয়া তাহারা লোক চক্ষে শুদ্ধ হইয়াছিল। কিন্তু বাউলদের মধ্যে চৈতন্য-নিতানন্দকে গ্ৰহণ করার পরও বৌদ্ধধৰ্ম্মের দেহতত্ত্ব এখনও চলিয়া আসিয়াছে। পূৰ্ব্ব ধৰ্ম্মের সংস্কাব বাউলদের সহজিয়া গানে স্পষ্টরূপে বিদ্যমান আছে। একদিন এক বাউলকে জিজ্ঞাসা করা হইযাছিল, “তুমি চৈতন্য ও নিত্যানন্দেব বিগ্ৰহ পূজা কব কি না ?” সে বলিল, “ইহাদেব কি বিগ্ৰহ আছে ? চৈতন্য হচ্ছেন ‘শূন্য মূৰ্ত্তি ।” ” এই উক্তি মহাযান বৌদ্ধগণের “ধ্যায়েৎ শূন্যমূৰ্ত্তিম” ইত্যাদি ভাবে ব্যক্ত শূন্য-বাদেব প্ৰতিধ্বনি করে। নিত্যানন্দের নাম হইয়াছিল “জাতনাশা”। তিনি সুবৰ্ণ-বণিক-শিরোমণি-সপ্তগ্রামেব ধনকুবেব-সন্ন্যাসাবলম্বী উদ্ধাবণ দত্তেব সঙ্গে একত্ৰ ভোজন করিতেন । অথচ সূৰ্য্যদাস সবকেলেব দুই কন্যা “বসুধা’ ও ‘জাহ্নবী”কে বিবাহ করিয়া নিত্যানন্দ দস্তুরমত গৃহী সাজিয়াছিলেন। চৈতন্যের আদেশে তিনি অবধূতের ব্ৰত ভঙ্গ করিয়া সংসাবাশ্রমী হইয়াছিলেন। তিনিই সমস্ত নিম্ন-জাতীয় হিন্দুর গৃহে বৈষ্ণব গোস্বামীদের পূজাদি। করিবাব ব্যবস্থা চালাই যাছিলেন ; ব্ৰাহ্মণের ইতিপূর্বে যাহাঁদের বাড়ীর দ্বারে পদার্পণ কাবাও মহাপাপ মনে করিতেন, বৈষ্ণব গোস্বামীরা তাহাদিগকে শিষ্যত্বে গ্ৰহণ ঋক্ষয়িয়া তাহাঁদের বাড়ীতে ভোজনাদি ও দেবপূজা অবাধে করিতে লাগিলেন । এজন্যই নিতানন্দের নাম হইয়াছিল “পতিত-পাবন।” ভক্তি ও প্রেমের রাজ্যের রাজচক্ৰবৰ্ত্তী চৈতন্য ; তিনি ভাবে বিভোর থাকিতেন, কিন্তু সমাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ সংস্পর্শে আসিতেন--নিত্যানন্দ । 布5〔雪可凸E树日