পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ANCY বৃহৎ বঙ্গ তিনি রাধিকার একটি ভােব উহাতে আরোপ করিয়া দানকেলী-কৌমুদী নামক নাটকের মুখবন্ধে “অন্তঃ স্মেরতয়োজ্জলা জলকণব্যাকীর্ণপক্ষাকুরা।” ইত্যাদি শ্লোকটি রচনা করিলেন, তাহাতে সাতটি ভাবের সমাবেশ আছে ; আলঙ্কারিকগণ উহাকে “কিলকিঞ্চিৎ” ভাব সংজ্ঞা দিয়াছেন। কৃষ্ণকমল গোস্বামীর স্বপ্নবিলাস এবং বাই উন্মাদিনী প্ৰভৃতি পুস্তক রাধিকার নামে চৈতন্য-লীলা;-বিশেষ রাই উন্মাদিনী গ্ৰন্থখানি চৈতন্যচরিতামৃতাদি গ্ৰন্থ ছানিয়া, তাহদের সারাংশ কবিত্বমণ্ডিত করিয়া লিখিত হইয়াছে। ইহাতে এমন একটি কথা নাই, যাহা চৈতন্য-জীবন হইতে সংগৃহীত হয় নাই। অথচ এই পরিপূর্ণ অধ্যাত্মতত্ত্ব বা ভক্তি-সংবাদ এমনই করুণভাবে লিখিত হইয়াছে যে রাধিকার এই রূপ ও চরিত্ৰ-মহা করুণার প্রস্রবণস্বরূপ হইযাছে । কে বলিবে এই কাব্যের উৎস মর্ত্য-বাহিনী ভাগীরথীস্বৰ্গ-গামিনী মন্দাকিনী নহে ? উহা সংসারের বেশ ধরিয়া আসিয়াছে সত্য কিন্তু উহার উৎপত্তিস্থান স্বৰ্গে। চৈতন্যদেবেব মূৰ্ত্তি যদি অতি স্পষ্টভাবে কেহ দেখিতে চান, ভাল গায়কেব মুখে 'রাই উন্মাদিনী’ যাত্ৰাখানি শুনুন । গোবিন্দ দাস প্রভৃতির পদে বর্ণিত আছে যে সময়ে সময়ে রাধিক কৃষ্ণের ক্ৰোড়ে থাকিয়াও “কোথা কৃষ্ণ” “কোথা কৃষ্ণ' বলিয়া কাদিয মূৰ্ছিত হইতেন । যিনি দিনরাত্র কৃষ্ণের সঙ্গবিচু্যত হইতেন না, তিনি কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলিয়া বিরহীর মত কঁাদিতেন-রাধাতে আরোপিত এই ভাব সেই লীলার দ্যোতক । চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতাব্দীতে বহু দেববিগ্রহ ও মন্দির মুসলমান অত্যাচারীরা ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছিল। তখন বঙ্গদেশেব ধুবে ঘরে কষ্টিপাপ ব-নিৰ্ম্মিত বাসুদেব-বিগ্রহেব পূজা হইত। এই সকল বিগ্ৰহ ভক্তদের প্রাণের ন্যান্য প্রিয় ছিল । যাহার কাছে বসিয়া রাত্রিদিন জপ চলিয়াছে,--নিত্য শত শত কুলবধু যাহাৰ জন্য নৈবেদ্য ও পুষ্পপত্র রচনা করিতেন,--যাহার ভোগ কত যত্নেব সহিত রান্না হইত,-যাহার আবতির জন্য কত মালী বাগানের ফুল সংগ্ৰহ করি যা মাল্য প্ৰস্তুত করিত এবং যাহাব মন্দির-ধূপ অন্তরেব সমস্ত কলুষ দূর কবিত, এবং গঙ্গাস্নাত, পট্টবাস-গৰিহিত ব্ৰাহ্মণ শুদ্ধদেহ ও শুদ্ধান্তঃকরণে যাহার পূজা অৰ্চনা করিতেন, সেই সকল প্ৰাণাধিক বিগ্রহেব ধ্বংসেবা পাব ভগ্নদেবমন্দির শূন্য হইয়া পড়িল। কত পুরোহিত ও পাণ্ডা হয়ত স্বীয় প্ৰাণ বিধক্ষ্মীর খড়গাঘাতে বিসর্জন দিয়া শ্ৰীবিগ্ৰহ-রক্ষার বিফল প্ৰয়াস পাইযাছিলেন-সেই সকল বিগ্ৰহ দেশ হইতে অন্তহিত হইল। কিন্তু ভক্তের মানসপটে তাহ আবও উজ্জ্বল হইয়া ভঁাহাব কল্পনাকে প্ৰবুদ্ধ করিতে লাগিল । সেই চন্দনানুবঞ্জিত কষ্টিপাপবোৰ কৃষ্ণবৰ্ণ ৰূপ তাহাদের বুকে শেলসম বিদ্ধ হইয়াছিল। কালো কিছু দেখিলেই সেই কালো রূপেব কথা মনে হইত। বঙ্গের প্রাচীন এবং আধুনিক বৈষ্ণব সাহিত্যে কালোৰূপেব প্ৰেম-স্নিগ্ধ উল্লেখ সৰ্ব্বত্র দৃষ্ট হয় ; এজন্য রাধিক কাজল পরিতেন না, কালো শাড়ী দেখিলে চমকিত হইতেন । তিনি সখীকে বলিতেছেন, “কালো কুসুমকরে, পরশ না করি ডরে, এ বড় মনেব মনোব্যথা” ( চণ্ডীদাস ) { এজন্যই তিনি কৃষ্ণবর্ণ মেঘ দেখিলে নিশ্চল ও মুগ্ধ চক্ষুদুটি সেই দিকে নিবদ্ধ রাখিতেন, “সদাই ধেয়ানে চাহে মেঘপানে, না চলে নয়নের তাবা৷ ” এজন্যই তিনি মালতী মালা খুলিয়া কালো