পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীনিবাস, নরোত্তম ও শ্যামানন্দ ԳSS) চাদ রায় গৌড়ঘারে প্রত্যাবর্তনের পর বাদশাহ তঁহাকে পুনরায় ডাকাইয়া পাঠাইলেন এবং অতি শ্ৰীতির সহিত বলিলেন, “সেবার আমি তোমাকে শুধু তোমার পৈত্রিক ও বাহুবলর্জিত সম্পত্তির অধিকার দিয়াছি, আজ তোমাকে একটা পুরস্কার দিব।” বাদশাহের আদেশঅনুসারে চাদ রায়কে একটি ফারমান দেওয়া হইল, তাহাতে তিনি আহেদি পরগনার অধিকার পাইলেন । চাদ রায়ের দলে যে সকল ব্ৰাহ্মণ দত্ম্য ছিলেন তঁাহারা অনেকেই নরোত্তমের শিষ্যত্ব গ্ৰহণ করিলেন। ইহাদের মধ্যে গোবিন্দ বাড়ুয্যে, কালিদাস চট্টো, নিরারণ চক্ৰবৰ্ত্তী, রামজয় চক্ৰবৰ্ত্তী, হরিনাথ গাঙ্গুলী এবং শিব চক্ৰবৰ্ত্তীর নাম নরোত্তম-বিলাস ও অপরাপর পুস্তকে উল্লিখিত দেখিতে পাই। মহাপ্ৰভুর জীবনে ভক্তির মাধুৰ্য্যই বেশী ছিল, তাহা জনসাধারণকে মুগ্ধ করিত। নিত্যানন্দ পতিত জাতিদের মধ্যে বৈষ্ণব গোসাইদের পৌরোহিত্য চালাইয়াছিলেন, সমাজ তাহাকে প্ৰথম বদ্ধ করিয়া রাখিয়াছিল। নিত্যানন্দের সঙ্গে কন্যার পরিণয় সম্পাদন করার জন্য সূৰ্য্যদাস সরখেল ব্ৰাহ্মণ-সমাজে খুব বেশী বেগ পাইয়াছিলেন। অদ্বৈত হরিদাসকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য শান্তিপুরে বিলক্ষণ লাঞ্ছিত হইয়াছিলেন। ইহারা বুঝিয়াছিলেন হিন্দু সমাজের সঙ্গে বিরোধ করিলে সমাজে আচল হইয়া পড়িবেন-তাহা হইলে সমাজের সর্বাঙ্গীণ উন্নতির চেষ্টা সফল হইতে পরিবে না । নিত্যানন্দের বংশধর ক্ষীরোদবিহারী গোস্বামিকৃত "নিত্যানন্দ বংশাবলী ও সাধনা” পাঠ করিলে পাঠকগণ বুঝিতে পরিবেন, অদ্বৈত ও নিত্যানন্দের বংশধরেরা বহু চেষ্টায় এবং অনেক অর্থ ব্যয় করিয়া ব্ৰাহ্মণ কুলীন-সমাজে আদানপ্ৰদান-সম্পর্ক বজায় রাখিয়াছিলেন। র্তাহারা যদি বিনীত হইয়া সমস্ত দাবী-দাওয়া মিটাইয়া কুলীন-সমাজকে হস্তগত না করিতেন, আজ খড়দহ ও শান্তিপুর একে বারে সমাজ-বহির্ভূত হইয়া থাকিত । কিন্তু নরোত্তম সমাজের কাছে একটুও অবনতি স্বীকার করেন নাই। বরঞ্চ বৈষ্ণবেরা জনসাধারণের এক বিশাল সভা আহবান করিয়া নরোত্তমকে খাটী ব্ৰাহ্মণ বলিয়া স্বীকার করিয়া তাহাকে যজ্ঞসূত্ৰ দান করিয়াছিলেন। এই ব্যাপারে পৌরোহিত্য করিয়াছিলেন নিত্যানন্দের পুত্র বীরভদ্র। এখন আর শুধু বলরাম মিশ্র কিংবা গঙ্গারাম চক্ৰবৰ্ত্তী নহেন, চাদ রায়প্রমুখ সন্ত্রান্ত ও বিশিষ্ট ব্ৰাহ্মণ প্ৰকাশ্যভাবে তাহার শিষ্যত্ব স্বীকার করিয়া তাহার পদধূলি মস্তকে ধারণ ও উচ্ছিষ্ট ভক্ষণ করিতেছিলেন। ব্ৰাহ্মণ-সমাজের ক্ৰোধ সকল সীমা অতিক্রম করিল, তাহারা একেবারে ক্ষেপিয়া গেলেন । কলিকাতার নিকট পৰ্কপলী (আধুনিক পাইকপাড়া।) তখন সমৃদ্ধ নগরী ছিল, তথাকার রাজা নৃসিংহ রায় একজন ব্ৰাহ্মণভক্ত গোড়া হিন্দু ছিলেন। এই রাজপরিবার কায়স্থ হইলেও সমাজে ইহাদের খুব প্রভাব ছিল। ব্ৰাহ্মণের সমবেত হইয়া সমাজসংস্কারের একটা চূড়ান্ত ব্যবস্থা করিতে সঙ্কল্প করিলেন। তাহারা ছয়জন প্রতিনিধি নৃসিংহ রাজার নিকট পাঠাইলেন। এই ছয় জনের নাম যদুনাথ বিদ্যাভূষণ, কাশীনাথ তর্কভূষণ, হরিদাস শিরোমণি, চন্দ্ৰকান্ত ন্যায়পঞ্চানন, শিবচরণ বিদ্যাবাগীশ এবং দুর্গাদাস বিদ্যারত্ন। ইহারা পকপীর