পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীনিবাস, নরোত্তম ও শ্যামানন্দ ۱\ সৃষ্টি হইল, তদ্বারা তাহাকে ভগবানের অবতার প্রতিপন্ন করিতে। তিনি বরাহ হইয়া গর্জন করিতে লাগিলেন, ভীষণ এক সৰ্পের উপর গুইয়া অনন্তশয্যাশায়ী বিষ্ণুর অভিনয় করিলেন, বহুলোকের খাদ্য এক খাইয়া দামোদর হইলেন, চতুভূজ ও ষড়ভূজ মূৰ্ত্তিতে ঘন ঘন দেখা দিতে লাগিলেন, একদিনে আম্রবীজ বপন করিয়া সেইদিনই গাছে ফল উৎপন্ন করিলেন, জামীরের গাছে কদম্ব ফুটাইলেন, কখনও নৃসিংহমূৰ্ত্তি ধারণ করিলেন (চৈ. ভ মধ্য ২য়, মধ্য ৩য়, চৈ, চা, মধ্য, ১৭ প, ১২-১৩ শ্লোক, চৈ. চি. মধ্য, ৩য় প. ৪৯ শ্লোক প্ৰভৃতি দ্রষ্টব্য )। লোচন দাস লিখিয়াছেন, তিনি পুরীতে আছেন শুনিয়া লঙ্কা হইতে বিভীষণ র্তাহার সহিত দেখা করিতে আসিয়াছিলেন, এ সকল কথা পূর্বে বিস্তারিতভাবে লিখিত হইয়াছে। বস্তুত: চৈতন্য-বিরহখিন্ন নবদ্বীপবাসীদের মধ্যে যে-কেহ তাঁহাকে বিষ্ণুর অবতার প্রতিপন্ন করিতে চেষ্টা করিয়াছে, সেই আদৃত হইয়াছে। কেহ কেহ লিখিয়াছেন, ‘অলৌকিক গল্পে যে বিশ্বাস না করিবে-তাহার মস্তকে তিনি পদাঘাত করিবেন।” চৈতন্যচরিতামৃত পাঠ করিলে স্পষ্টই বুঝা যায়—চৈতন্তের পূর্বলীলাতেই যত অলৌকিক ব্যাপার, রূপ গোস্বামীরা কৃষ্ণদাস কবিরাজকে যে সকল বৃত্তান্ত বলিয়াছিলেন, তাহাতে অলৌকিক অংশ খুব অল্প। এই পূৰ্ব্বলীলার বর্ণনা নবদ্বীপবাসীরা কুরিয়াছিলেন। যাহাকে র্তাহারা ভগবান বলিয়া বিশ্বাস করিয়াছিলেন, তাহার সম্বন্ধে ভাগবত-লীলা আরোপ করা র্তাহারা দোষাবহ মনে করেন নাই, বরঞ্চ উহা অবিশ্বাস করা তাহারা পাপ মনে করিয়াছেন । এজন্য মুরারি গুপ্তের মত প্ৰবীণ পণ্ডিতও অনেক আজগুবী কথা বিশ্বাস করিয়া তাহার কাব্যে স্থান দিয়াছেন। শুধু গোবিন্দদাসের করাচা এই দোষ হইতে মুক্ত। একথা নিশ্চয় বলা যাইতে পারে যে চৈতন্য নবদ্বীপে থাকিলে ভক্তির ক্ষেত্রে ঐ সকল আগাছা জন্মাইতে পারিত না। তিনি এসকল অলৌকিক কথার কখনই প্রশ্ৰয় দিতেন না। তিনি শতবার এই সকল ভক্তির আতিশয্য নিরস্ত করিয়াছিলেন, এমন কি সাৰ্ব্বভৌমের মত পূজ্যপাদ প্ৰবীণ পণ্ডিত র্তাহাকে সাক্ষাৎ বিষ্ণু বলতে তিনি ক্রুদ্ধস্বরে বলিয়াছিলেন, “প্ৰভু কহে সাৰ্ব্বভৌম আর কথা কহ । আতাল পাথাল কথা কেন বা বলহ ।” তাহার অনুপস্থিতিত্তে গৌড়দেশে ভক্তির রাজ্যের পথঘাট, ঘরের আঙ্গিনা উপগল্পের আগাছায় পূর্ণ হইয়া গিয়াছিল। চৈতন্যদেবকে। ভগবান রূপে প্ৰতিপন্ন করার পর গোস্বামীরা নিজেরাও তাহার দেবত্বের অংশীদার হইতে দাবী করিলেন। চৈতন্য স্বয়ং বিষ্ণু, নিত্যানন্দ বলরাম এবং অদ্বৈতাকে সদাশিব করা হইয়াছে। কেশব ভারতী—শ্ৰীকৃষ্ণ-গুরু সান্দীপনি মুনি, পুণ্ডৱীক বিদ্যানিধি-বৃষভানু, নরহরি দাস-মধুমতী, রামানন্দ-বিশাখ, রূপশ্ৰীৱৰূপমঞ্জরী, গদাধর।--রাধিকা, রাঘব-চম্পকলতা, সনাতন-লবঙ্গমঞ্জরী, গদাধরভট্টসুদেবী, রঘুনাথ দাস-রূপমঞ্জরী, মুকুন্দ-বৃন্দাদেবী, দেবানন্দ-গৰ্গমুনি, কাশীশ্বরইন্দুরেখা, ভূগর্ভ-প্ৰেমমঞ্জরী, এইরূপ প্রত্যেকেই রাধাকৃষ্ণলীলা-সংক্রান্ত দ্বাপর যুগের কোন সঙ্গীর অবতার বলিয়া কীৰ্ত্তিত হইয়াছেন। গোস্বামিগণ এইভাবে মনুষ্যজগতের উর্কে সিংহাসন স্থাপন করিয়া দেবকল্প হইলেন এবং জনসাধারণের নিকট পুজার দাবী দৃঢ়