পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গুরুবাদ ও পরকীয়া V` রঘুনাথ দাস, রূপ, সনাতন, উদ্ধারণ দত্ত, নরোত্তম, বীরহাম্বির, চাঁদ রায় প্রভৃতি রাজা ও রাজকল্প ব্যক্তিরা তঁহাদের অতুল বৈভব পরিত্যাগ করিয়া সন্ন্যাসী হইয়াছিলেন। ইহাদের প্ৰত্যেকটি এক এক জন বুদ্ধের ন্যায়। এই বাঙ্গলাদেশে গোপীচন্দ্ৰ, দীপঙ্কর হইতে লালাবাবু ও চিত্তরঞ্জন পৰ্য্যন্ত যত রাজা, রাজপুত্র ও রাজকল্প ব্যক্তি সন্ন্যাস গ্ৰহণ করিয়াছেন জগতের এত স্বল্প-পরিসর কোন দেশে বোধ হয় সেরূপ-সংখ্যক রাজর্ষিদের আবির্ভাব হয় নাই। কিন্তু এই রাজর্ষিদের দেশেও ষোড়শ-সপ্তদশ শতাব্দীতে চৈতন্যের প্রভাবে যতজন রাজতুল্য ব্যক্তি ইন্দ্ৰতুল্য বৈভব পরিত্যাগ করিয়া পথের ভিখারী হইয়াছেন, এত আর কোন যুগে হয় নাই। এই দেশ খুব বড় আদর্শ ও খুব বড় ত্যাগের দেশ। এ হাটে ক্ষুদ্রকথা বিকায় না, এখানে জীবন-মরণ পায়ের ভৃত্য-কিন্তু ধ্বংসের জন্য নহে, অনুরাগ ও প্রেমের জন্য । এদেশে অশ্রীর যে বল, অন্যত্ৰ গোলাগুলি ও বারুদের সে বল নাই। চৈতন্য আনন্দাশ্রীর উপর তাহার বিশাল সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করিয়া গিয়াছেন । জগৎ কতকাল পরে তঁহার এই উচ্চ আদর্শকে বুঝিতে পরিবে, জানি না। ਲਜ Pਵਿ গুরুবাদ ও পরকীয়া আমরা দেখাইয়াছি, মহাপ্ৰভুকে ভগবান কল্পনা কবিয়া সেই কেন্দ্রের পরিধিতে যে সকল নারদেবতার মণ্ডলী পরিকল্পিত হইয়াছিল তাহা কখনই চৈতন্যের অনুমোদিত হইত না। চৈতন্যের অবতার-বাদ এই কল্পনার ভিত্তি । ইহা কখনই তিনি গ্ৰহণ করিতেন না, বরঞ্চ তিনি সৰ্ব্বদা ইহার বিরোধী ছিলেন । রামরায় তঁাহার সঙ্গে যে সকল কথাবার্তা বলেন, এবং যে সকল গান ও নাটক রচনা করেন, তাহা চৈতন্যের সম্পূর্ণ অনুমোদিত । বস্তুতঃ যে কয়েকখানি পুস্তক তিনি নিত্য আবৃত্তি করিতেন, তন্মধ্যে “রায়ের নাটকগীতি”-খানি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। রামানন্দের প্রসিদ্ধ “সো নহ রমণ হাম নহ। রমণী” গানটি চৈতন্যচরিতামৃতে উদ্ভূত হইয়াছে। ইহাতে স্পষ্ট বলা হইয়াছে, জীব ও ভগবানের মধ্যে যে সম্বন্ধ তাহা ভগবানের অনুরাগমূলক। “পহিলহি প্রেম নয়নভঙ্গে ভেল”-ৰ্তাহার দৃষ্টির ভঙ্গীতে আমার প্ৰেম প্রথম উদ্ভূত হইল, দিনে দিনে তাহা বাড়িয়া চলিল, তাহার অবধি হইল না। এই প্রেমের মধ্যে আর কেহ ছিল না, দূতী বা অন্য তৃতীয় ব্যক্তির প্রয়োজন হয় নাই। “না মিলল দূতী, না মিলল আনি, দুইক মাঝে শুধু পাঁচবান” এই কথায় গুরুবাদকে স্পষ্ট অস্বীকার করা হইয়াছে।। চৈতন্তের নিজ উক্তি “ঈশ্বরে বিশ্বাস ঈশ্বরে আনিয়া মিলায়” বৃহৎ বঙ্গ/৫৪ west