পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ፃፃ8 বৃহৎ বঙ্গ “হিন্দুজাতির অধঃপতনের অন্যতম কারণ অবরোধপ্ৰথা। ঈদৃশ বর্বরতা কোন সুসভ্য জাতির মধ্যে নাই। দেশ জাগাইতে হইলে স্ত্রীস্বাধীনতার আবশ্যক। দেখুন বৃক্ষের অৰ্দ্ধাংশে সুৰ্য্যের উত্তাপ পাইয়া যদি বাকী অৰ্দ্ধাংশ উহা না পায়, তবে সেই বৃক্ষ রীতিমত হৃষ্টপুষ্ট ও বলিষ্ঠ হইতে পারে না -এই জন্যই চিন্তাশীল কবি বজনিনাদে ঘোষণা করিয়াছেন, ‘না জাগিলে সব ভারত-ললনা, এ ভারত আর জাগে না জাগে না ’, • • • • • আপনাদের আচারব্যবহারের সঙ্গে সুশিক্ষিত উন্নত ব্ৰাহ্ম-সমাজের বেশ মিল আছে। তাই আপনাদিগকে আগামী রবিবার সেই পবিত্ৰ ব্ৰাহ্ম-সমাজে যাইতে অনুরোধ করি । তথায় আমি থাকিয়া বহু উন্নতির পথ দেখাইয়া দিব |• • • • • • • • • আমি স্বয়ং কয়েকখানি গাড়ীসহ এই আখড়ায় আগামী রবিবার ১২টায় আসিতে প্ৰস্তুত আছি। আমার সঙ্গে আপনারা গেলে ব্ৰাহ্ম-সমাজ ধন্য হইবেন ।” হাকিমবাবুর এই বক্তৃতার মৰ্ম্ম কেহ বুঝিলেন না। তঁহাদের পক্ষে যে তাহা বুঝিবার কোন আবশ্যকতা আছে তাহাও তেঁাহারা মনে করেন না। শ্ৰীগুরুর শ্ৰীমুখের উপর যে হাকিমের মুখ বা অন্যের মুখ থাকিতে পারে, তাহা তাহারা জানিতেন না । তাহারা নিভুল এবং বাকী সমস্তই ভুল, ইহাই তাহদের মজ্জাগত দৃঢ় ধারণা। তঁহারা বিদ্যা ও বুদ্ধিকে কুপথের সহায় বলিয়া মনে করেন। তঁহার বেদ বা শাস্ত্রকে ঐহিকের খেলা বলিয়া মনে করেন। ব্ৰাহ্মণ-পণ্ডিতকে বৃথা মনুষ্য বলিয়া মনে করেন, তাহারা সংসারে থাকিয়াও ংসারিক নিয়মকে তুচ্ছ মনে করেন। গুরু, পুরোহিত, স্বামী ও গুরুজনকে তত গ্ৰাহ করেন না। দেবপূজা, উপবাস, শঙ্খ, ঘণ্টা, পবিত্রতা, নিয়ম ও নিষ্ঠা প্ৰভৃতিকে আসার মনে করেন, আনন্দময়-মেলার আনন্দময় ভজনকেই জীবনের সারাংশ মনে করেন । তাই হাকিমের বক্তৃতার উত্তরে এই মেলার সাধু ও সাধুনীরা নিম্নোক্ত গান ধরিল :—“মন বাদুড় সন্ধ্যার সময় উড়িসা না,---কাল কাক পেলে তোরে ছেড়ে দিবে না। শোন বলি মুর্থ বাদুড়, দিনে থেকে দিন-কানার মত, রাত্রে হইও চতুর। উপর দিকে দিয়ে লেঙ্গুর, ঝুলন। স্বভাব গোল না ।• • • • • •” এই গান হইবার সঙ্গে সঙ্গেই ভোজনকাৰ্য্য নির্বাহিত হইয়া আচমনের সময় আসিল । তাই দশ বারো জন স্ত্রীলোক-হাকিমবাবুর মুখ ধোওয়া জল খাইবার জন্য প্ৰস্তুত হইল। কাজেই এবার বিষম হুড়াহুড়ি বাধিয়া গেল। তাহার ফলে হাকিমবাবুকে রাত্রি দশটার সময়ে স্নান করিতে বাধ্য হইতে হইল। এমন সময়ে কমলদাস মনে মনে স্থির করিল, হাকিমবাবু অবশ্য সন্তুষ্ট হইয়াছেন। কিন্তু ব্যক্তিভেদে যে বৈষম্য ঘটে, তাহা সে জানিত না। যে উপাদানে অশিক্ষিত নীচলোকের আনন্দ জন্মে, সুশিক্ষিত সন্ত্রান্ত ধৰ্ম্ম-প্ৰাণ লোকের তাহাতে আনন্দ না জন্মিবারই সম্ভাবনা বেশী। বরঞ্চ স্ত্রীলোকের এত নির্লজ্জত ও অসভ্যতায় তাহার ক্ৰোধ জন্মিয়াছিল। তাই তিনি স্নানের পর কাহাকেও গাত্ৰ মোছাইবার অধিকার দিলেন না । কমলদাস এই আমোদকে ধৰ্ম্মসঙ্গত বলিয়া প্ৰমাণের প্রত্যাশায় হাকিমকে লক্ষ্য করিয়া ঘোষণা করিলেন। :--“পাশবন্ধো ভবেজীবঃ পাশমুক্তঃ সদা শিবঃ” অর্থাৎ ঘূণা, লজ্জা, ভয়, ক্ৰোধ, লোভ, হিংসা, নিন্দ ও আসক্তিকে অষ্টপাশ (আট প্রকার বন্ধন) বলে । সাধনবলে সেই