পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

PSP বৃহৎ বঙ্গ বৰ্দ্ধমান-রাজের ব্যবহারে অসন্তুষ্ট হইয়া বহু সৈন্য সংগ্রহ করেন। সেই নির্বাপিত পাঠানবহি যাহা একেবারে নিরস্ত হইয়া গিয়াছিল—তাহার একটা ফুলিঙ্গ তখনও দেশের এক কোণায় ছিল। পাঠান-শক্তির এই শেষ দাপটি হঠাৎ জ্বলিয়া উঠিল । রহিম সেখী পুনরায় বঙ্গে মোগলশক্তি বিলোপ করিয়া পাঠান রাজত্বের প্রতিষ্ঠা করিতে সঙ্কল্প করিয়া শোভাসিংহের সঙ্গে যোগ দিলেন । ইহারা বৰ্দ্ধমানরাজ কৃষ্ণরামকে বধ করিয়া তাহার রাজ্য অধিকার করিলেন । কৃষ্ণরামের এক পরম সুন্দরী কন্যা ছিলেন, শোভা সিংহ তাহার বিলাস চরিতার্থ করিবার জন্য তঁহাকে আলিঙ্গন কবিতে যাওয়ায় রাজকুমারীর ছুরিকাঘাতে প্ৰাণ দিলেন। তঁহার ভ্রাতা হিন্মৎ সিংহ পাঠানদের সহযোগে দেশ লুণ্ঠন করিতে লাগিলেন। সৈন্যসামন্তেরা একবাক্যে রহিমকে তাহদের নেতৃত্বে ব্যবণ করিল। রহিম অপ্ৰতিহত গতিতে মালদহ হইতে রাজমহল এবং মুরাসিন্দাবাদ পৰ্যন্ত সৰ্ব্বস্থান দখল করিয়া লইলেন। শেষোক্ত স্থানে নিয়ামৎ খাঁ নামক এক জমিদার তাহাকে প্ৰবল বাধা দিয়াছিলেন । কিন্তু রহিম তাহাকে নিহত করিয়া বিলাতের লোকেরা বাণিজ্য দ্বাবা অনেক অর্থ সঞ্চয় করিয়াছেন জানিয়া সুতানুটি, চুচুড়া এবং চন্দননগর লুটপাট করিলেন। সাহেবেরা ইহাকে বিশেষরূপে বাধা দিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন । এবং এই সুযোগে তাঁহাদের কারবাবখানার দুর্গগুলি দিনবাত লোক খাটাইয়া খুব সুদৃঢ় করিয়া লাইলেন। এদিকে কৃষ্ণ নামের পুত্ৰ জগৎবাম নবাব ইব্রাহিম খাকে সমস্ত ব্যাপার জানাইলেন, অলসপ্রকৃতি নবাব যশোরের ফৌজদার নুব উল্লাকে একটা হুকুম দিয়া ক্ষান্ত রহিলেন । সুরউল্লা অর্থসংগ্রহে যেরূপ পটু, সামরিক ব্যাপারে তদ্রুপ ছিলেন না। তিনি তিন হাজার সৈন্য লইয়া কিছুই করিতে পারিলেন না। বিদ্রোহীদের আস্পৰ্দ্ধা বাড়িয়া গেল। ইব্রাহিম খার কৰ্ণে চতুর্দিক হইতে সংবাদ পৌছিতে লাগিল, তিনি উপেক্ষার ভাবে তাহার পুত্ৰ জবরদস্ত খা এবং মন্ত্রীদিগকে বলিলেন, “এসকল ঘরাও যুদ্ধ ভাল নহে, ইহাতে বলক্ষয় হয় মাত্র। করুক না। কেন-পাঠানেরা কিই বা করিবে ? এর পরে আপনা হইতেই নিরস্ত হইয়া যাইবে। কিছু রাজস্বের ক্ষতি হইতেছে এই মাত্র।” এদিকে তখন সমস্ত বাঙ্গল। দেশটা পুনরায় পাঠানদের প্ৰায় দখলে আসিয়াছে । আরঙ্গজেব এই বৃত্তান্ত প্ৰথম শুনিয়া বিষম বিচলিত হইলেন এবং তখনই তাহার পৌত্ৰ কুমার আজিম ওস্মানকে বাঙ্গলা-বিহার-উড়িষ্যার গদিতে অভিষিক্ত করিয়া এবং নবাব ইব্রাহিমের পুত্ৰ জবরদস্ত খাকে সেনাপতিত্ব প্ৰদান করিয়া বিদ্রোহ দমনে নিযুক্ত করিলেন। সুলতান আজিম ওস্মান - ১৬৯৭-১৭০৭ খৃঃ জবরদস্ত খাঁ ১৬৯৭ খৃঃ অব্দে পাঠানদিগকে পরাস্ত করেন। রাজমহলের যুদ্ধে রহিম খাঁর সেনাপতি খিরেট খাঁ নিহত হন। জবরদস্ত খ্যা ইংরেজ ও ডাচুদিগের কারবার-গৃহগুলি উদ্ধার করেন, কিন্তু পাঠানদের লুষ্ঠিত ধনরত্ন ফিরাইয়া দিতে অস্বীকার করেন। এই সময়ে মুরসিদকুলি ধা নামক এক প্ৰতিভাপন্ন ব্যক্তিকে আরঙ্গজেব রাজস্ব বিভাগের কর্তা ‘দেওয়ান’ করিয়া পাঠান। মুৱসিন্দকুলি খা যৌবনে মুসলমানদের হাতে পড়িয়া হাজি সুফিয়া নামে