পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b'88 বৃহৎ বঙ্গ করাইয়াছিলেন—প্ৰবাদ এই যে, এই দীঘিকা-খনন-ব্যাপারের অন্যতম উদ্দেশ্য সৈন্য সংগ্ৰহ করা । প্ৰকাশ্যভাবে সৈন্য সংগ্ৰহ করিলে উহা নবাবের নজরে পড়িতে পারে, এই আশঙ্কায় তিনি দীঘি-খননকারী সহস্ৰ সহস্ৰ লোককে রাত্ৰে সামরিক শিক্ষা প্ৰদান করিতেন । একদল লোকের শিক্ষা সম্পূর্ণ হইলে তাহাদিগকে বিদায় করিয়া নূতন দল নিযুক্ত করিতেন। এই ভাবে রাজ্যের বহু লোক অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার শিখিয়াছিল। প্রয়োজন হইলে তাহারা সীতারামের আহবানে একত্র হইয়া যুদ্ধের জন্য প্ৰস্তুত হইত। তঁহার পরগনায় মগ, পাঠান ও দস্যদের অত্যাচার নিবারিত হইয়া শান্তি প্ৰতিষ্ঠিত হইয়াছিল। সায়েস্তা খাঁ সীতারামের বিক্রম ও দসু্য-নিবারণের কথা শুনিয়া বরং প্রতি হইলেন । তিনি আরঙ্গজেবের নিকট হইতে ‘রাজা” উপাধির সনন্দ আনাইয়া তাহাকে দিলেন। অনুমান ১৬৮৭-৮৮ খৃঃ অব্দে সীতারাম এই “রাজা” উপাধি প্ৰাপ্ত হন । নলদি পরগনা বহুজননিবাসে পরিণত হওয়াতে ইহার আয় খুব বাড়িয়া গিয়াছিল, তাহা ছাড়া সাৈিতব পরগনার অনেকটা তিনি তালুক হিসাবে লইয়াছিলেন। র্তাহার প্ৰতাপ এখন প্রবাদবাক্যের ন্যায় লোকের মুখে মুখে প্রচারিত হইল। তিনি বিপুল উৎসবে পিতৃশ্ৰাদ্ধ করিলেন। সেকালে এই ব্যাপারে তাহার ২৮,৯৭২, টাকা ব্যয় হইয়াছিল। সতীশ মিত্র বলেন, “এখনকাব দিনে উহা অনূ্যন দুই লক্ষ টাকার সমান।।” ( ৫৩৯ পৃঃ) । রাজা উপাধি প্ৰাপ্তির পর ইনি মহম্মদপুরে রাজধানী স্থাপনপূর্বক যেরূপ বহু ঘটার সহিত অভিষেকোৎসব করিয়াছিলেন, বহুদিন কোন হিন্দু রাজা বাঙ্গলায় সেরূপ করেন নাই। লোকে মুখে মুখে গাহিয়া বেড়াইত—“ধন্য রাজা সীতারাম বাঙ্গলা বাহাদুর। যার বলেতে চুরি ডাকাতি হয়ে গেল দূৰ ৷ বাঘ মানুষে একুই ঘাটে সুখে জল খায়। রামী-শ্যামী পুটলীি বঁধি গঙ্গামানে যায়৷” শৈশব হইতে শিবাজির মত সীতারাম সাৰ্ব্বভৌম হিন্দুরাজ্যপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন। র্তাহার উদ্দেশ্যসাধনে কযেকজন অক্লান্তকৰ্ম্ম মহাবীর ওঁঠাখার সহায় হইয়াছিলেন, ইহাদের একজনের নাম “মেনা হাতী।” বস্তুতঃ তাহার বিরাট হৃষ্টপুষ্ট দেহ ও বলিষ্ঠ অঙ্গপ্ৰত্যঙ্গ দেখিলে তাহাকে ছোটখাট একটি হাতী বলিয়াই মনে হইত। দস্যরা ইহার নাম শুনিলেই অস্ত্রশস্ত্ৰ ফেলিয়া পালাইত। ইহার প্রকৃত নাম রামরূপ ঘোষ ( আকনার দক্ষিণ-বাড়ীর ঘোষবংশীয )। অপর একজনের নাম মুনিরাম ঘোষ-খুলনা জেলার বঙ্গজ কায়স্থ । মুনিরামের দুঃসাহসিক মন্ত্রণা ও মেনা হাতীর দৈহিক বল ও অদম্য বীরত্বসীতারামকে সৰ্ব্বকাৰ্য্যে প্ৰবুদ্ধ করিত। ইহা ছাড়া পাঠান বক্তার খা, মোগল আমল বেগ, রূপচাঁদ ঢালী ও ফকিরা (মাছাকাটা ) প্রভৃতি সেনাপতিও যুদ্ধকালে তাহার দক্ষিণহস্তস্বৰূপ ছিল। এই নবগঠিত বীরদলের মধ্যে অনেকে খ্যাতি লাভ করিয়াছিল, ইহাদের মধ্যে সীতারামেব জীবনীলেখক অন্ধ যদুবাবু রােখ, রাম, শুম্ভো, শু্যামা, বিশে, হরে, কালা, নিমে, দীনে, ভুলো, জগা ও যেধো—এই বারজন প্রধান দস্যবীরের উল্লেখ করিয়াছেন, সকলেই বাঙ্গালী ছিল এবং শেষে সীতারামের দলভুক্ত হইয়াছিল। রাজা সীতারাম পাঞ্জাব