পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরবর্তী বাদসাহগণ ክ”(ሉ Œ কিন্তু সিংহাসনপ্ৰাপ্তির জন্য এই সকল গুরুতর অপরাধ, স্বগৃহে ডাকিয়া আনিয়া বন্ধুত্বের ভান করিয়া অতকিতভাবে হত্যা করা-এই সকল গৰ্হিত ও নিষ্ঠুর, কাৰ্য্য মোগল ইতিহাসে বারংবার দৃষ্ট হইয়াছে। সাম্রাজ্যের লোভ অতি প্ৰবল, এজন্য শাস্ত্রকারেরা বলিয়াছেন, “মুক্তিমিচ্ছসি রে তাত, বিষয়ান বিষবৎ ত্যজ ।” আলিবর্দী নবাব হইয়া সম্রাটদের রাজত্বে অহনিশ-সংঘটিত এই সকল ক্রুর ব্যবহারের একটিও বাদ দেন নাই। কিন্তু শত্রু ও র্যাহাদিগকে তিনি শত্রু বলিয়া মনে করিয়াছেন তঁহাদের সঙ্গে “মারি অরি, পারি। যে কৌশলে” নীতি চালাইয়াও তিনি অপর সকলের সঙ্গে অবাধ ও মুক্ত প্ৰাণের উদারতা, সুক্ষ্ম ন্যায়-অন্যায়বোধ ও প্ৰজাহিতৈষণা প্ৰভৃতি মহৎ গুণের পরিচয় দিয়াছিলেন। এই সকল বাদশাহদের অনেকেই বীরত্বের দৃষ্টান্ত দেখাইয়াছেন। কিন্তু আলিবন্দী ছিলেন বীরশ্ৰেষ্ঠ। তিনি বহু যুদ্ধ করিয়াছেন, শক্রির শেষ না করিয়া তিনি ছাড়েন নাই, কিন্তু কোন যুদ্ধেই তিনি পরাজিত হন নাই। বিপদের সম্ভাবনা দেখিয়া তিনি একপদও হটিয়া যান নাই, এবং প্ৰাণপ্ৰিয় অন্তরঙ্গ সুহৃৎ। যাহাদিগকে তিনি প্ৰতিষ্ঠা, ক্ষমতা ও ঐশ্বৰ্য্যের উদ্ধতম শিখরে লইয়া গিয়াছেন—ৰ্তাহারা যখন অকৃতজ্ঞ হইয়া তাহার বিদ্রোহী হইয়াছেন তখন সেই অপ্ৰত্যাশিত দুর্ব্যবহাবে তিনি তিলমাত্র ধৈৰ্য্য-চু্যত হন নাই। বাঙ্গলার বাদশাহদের মধ্যে আলিবর্দী সামরিক ব্যাপারে সর্বশ্রেষ্ঠ বীরদের সঙ্গে এক পঙক্তিতে আসন-গ্ৰহণেব উপযুক্ত। শেষবয়সে যখন র্তাহার মেহের নন্দদুলাল, পরমসুন্দব, তরুণ সিরাজুদ্দৌলা বিদ্রোহী হইয়া পাটনা দখল করিতে অভিযান করিলেন-তখন সেই চিরস্নেহপালিত বালক তাহার কি অপকার করিবেন, তাহা মুহূৰ্ত্তমাত্ৰও ভাবিলেন না, পাছে তাহার অনিষ্ট হয়, গায়ে কাটার আঁচড়েবা দাগ লাগে সেই ভাবনায় বিনিদ্র রজনী যাপন করিতে লাগিলেন। তিনি বাজত্বের প্রথমেই সরফরাজ পার পরিবারবর্গকে ঢাকাব্য পাঠাইখা দিলেন এবং র্তাহ দেব জন্য প্রচুর বৃত্তিব্য ব্যবস্থা করিলেন। তিনি পূৰ্ববৰ্ত্তী নবাবগণের সঞ্চিত বহু অর্থ লাভ করিয়া অকাতবে ও মুক্তহস্তে তাহা ব্যয় করিতে লাগিলেন । সম্রাট মহম্মদকে এককোটি টাকা নগদ ও সত্তব লক্ষ টাকার উপযোগী উপঢৌকন নজবানা পাঠাইলেন। নবাব বিহার ও উড়িষ্যাব শাসনভাৰ তাহাব আত্মীযদিগেধ মধ্যে বিতৰণ কবিলেন। এইভাবে যখন স্থির হইয়া কেবল সিংহাসনে বসিয়াছেন, তখন শুনিতে পাইলেন সম্রাট মহম্মদ সাহ তাহার অতুল ঐশ্বৰ্য্যেৰ কথা শুনিয়া যাহা পাইয়াছেন তাহাতে খুসী না হইয়া আরও অপরিমিত দাবী দিয়া ম্যবাদ পঁা নামক এক প্ৰতিনিধিকে পাঠাইয়াছেন । আলিবর্দী এই লোকটিকে প্রচুর উৎকোচে বশীভূত করিয়া, একটা হিসাব দাখিল করিয়া এবং সম্রাটের জন্য আব্ব একটি মূল্যবান উপঢৌকনের ব্যবস্থা করিয়া মুরাদকে রাজমহল হইতে বিদায়পূর্বক পুনরায় সিংহাসনে স্থির হইয়া বসিলেন। ( ১৭৪১ 월: 1 ) ইহার পরে সুজা উদ্দীন বাদাসাহের জামাতা মুরাসিদ খাকে উড়িষ্যার শাসনকর্তৃত্ব হইতে বিদায় করিয়া নবাব তৎস্থলে তঁহার ভ্রাতা হাজি মহম্মদের পুত্র সৈয়দ মহম্মদকে নিযুক্ত করিতে