পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নাসিরুদ্দিন ও পরবর্তী পাঠান-রাজগণ VSN) সুবুদ্ধি রায়কে খুবই ভালবাসিতেন, কিন্তু রাজ্ঞী। তাঁহাকে সমুচিত শাস্তি দিতে প্ররোচিত করেন; রাজা অনেক বুঝাইলেও রাণী কিছুতেই সুবুদ্ধি রায়কে ক্ষমা করিতে স্বীকৃত হইলেন না। হুসেন সাহ অগত্যা তাহার মুখে গোমাংস দিয়া তাহাকে জাতিচু্যত করিলেন। পণ্ডিতগণের ব্যবস্থা চাহিয়া সুবুদ্ধি রায় জানিতে পারিলেন যে তাহার তুষানলে প্ৰাণত্যাগ করা উচিত। সুবুদ্ধি রায় সম্বন্ধে আমরা শেষে লিখিব। এই বিষয়টি চৈতন্য-চরিতামৃতে উল্লিখিত আছে এবং ঘটনাটি ঐ পুস্তক রচনার বেশী পরবর্তী নহে, এজন্য উহা অবিশ্বাস্ত বলিয়া মনে হয় না। তিনি যে তৰুণ বয়সে এক হিন্দু ভূম্যধিকারীব ভৃত্য ছিলেন একথা অনেক ঐতিহাসিকই লিখিয়াছেন। পুরীর রাজা প্ৰতাপ রুদ্র যখন দাক্ষিণাত্যে যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত ছিলেন, তখন হুসেন সাহ অতর্কিতভাবে যাইয়া উড়িষ্যার অনেক দেবালয় ও বিগ্ৰহ ভগ্ন করেন, প্ৰতাপ রুদ্র বাড়ীতে ফিরিয়া আসিয়া প্ৰতিশোধ লইবার জন্য গৌড়বিজয়ের সঙ্কল্প করিয়াছিলেন, কিন্তু চৈতন্যদেব বহু লোকক্ষয় ও দেশের দুঃখ বৃদ্ধি হইবে, এই হেতু দেখাইয়া উক্ত সঙ্কল্প হইতে র্তাহাকে নিরস্ত করেন। কবি কর্ণপুর লিখিয়াছেন-প্ৰতাপ রুদ্রের বক্ষ লৌহকবাটের ন্যায় দৃঢ় ছিল, এবং প্ৰসিদ্ধ পাঠান মল্পগণ র্তাহার সহিত প্ৰতিদ্বন্দ্বিতা করিতে ভয় পাইতেন । ষ্টুয়াট সাহেব মুসলমান লেখকদের কথায় আস্থা স্থাপন কবিয়া লিখিয়াছেন, হুসেন সাহ পুরীর রাজাকে জয় করিয়া তঁহাকে সামন্ত রাজার শ্রেণীভুক্ত করিয়াছিলেন। মুসলমান-প্রদত্ত এই বিবরণ অলীক । দিল্লীশ্বর সেকেন্দর জৈনপুর দখল করিয়া বঙ্গবিজয়ার্থ অগ্রসর হইতেছিলেন, কিন্তু আলাউদ্দিন হুসেন সাহ তৎপুত্ৰ দানিয়ালকে বহু উপঢৌকনসহ সম্রাটের নিকট প্রেরণ করেন । সেকেন্দর সাহ প্রীত হইয়া সন্ধিৎসুত্রে আবদ্ধ হন । এই সন্ধিতে হুসেন সাহ স্বাধীন নৃপতি বলিয়া স্বীকৃত হন। তঁহার সহিত ত্রিপুরাবাজের যুদ্ধবিগ্ৰহাদি হইয়াছিল এবং তিনি চট্টগ্রাম ও ত্রিপুরা বিজয়ার্থ পরাগল খাঁ নামক সেনা-তিকে ও তৎপুত্র ছুটি থাকে নিযুক্ত করেন। তঁহার অন্যতম সেনাপতি মমারক খাকে ত্রিপুরেশ্বর যুদ্ধে পরাস্ত করিয়া উদয়পুরের রাজপ্রাসাদ সংলগ্ন কালীমন্দিরে বলি দিয়াছিলেন । ত্রিপুরা প্রসঙ্গে সে সকল কথা পুনরায় উল্লেখ করা হইবে } ১৫২০ খৃঃ অব্দে ( কাহারও কাহারও মতে ১৫১৯ খৃ: ), হুসেন সাহের মৃত্যু হয়। গৌড়ে তাহার সুচারু। কারুলেখাঙ্কিত সমাধি-মন্দিরে সিংহদ্বারের দুই দিক্‌ চিরিয়া ষে বটবৃক্ষ উখিত হইয়াছে, তাহার জটিল, স্কুল ও দীর্ঘ শিকড়গুলি মহাদেবের বক্ষোলম্বিত জটাজুটের মত দেখায়। হুসেন সাহের জ্যেষ্ঠ পুত্র নসরত সাহ পাঠান রাজাদের নীতির অনুবৰ্ত্তী হইয়া তাহার ভ্ৰাতাদিগকে হত্যা বা শৃঙ্খলাবদ্ধ করেন নাই,-বরঞ্চ তাহার ১৭ ভাইয়ের প্রত্যেককে রাজ্যোচিত মৰ্য্যাদা ও উচ্চ শাসনকাৰ্য্যভার দিয়াছিলেন । নাসরত "* *", "* সাহের সময়ে দিল্লীতে অত্যন্ত রাজনৈতিক গোলযোগ উপস্থিত হয়, AfR-des SeeR 8: সুলতান ইব্রাহিম লোডীকে পরাস্ত করিয়া বাবর ১৫২৯ श्रुः সিংহাসন অধিকার করেন। ইব্রাহিমের ভ্রাতা মহম্মদ পলাইয়া নসরত সাহের আশ্রয় গ্ৰহণ করিতে বাধ্য হন। ইব্রাহিম লোডির এক কন্যাকে মহম্মদ সাহি লইয়া গিয়াছিলেন ; নসরত সাহ এই কন্যাকে জাকজমকের সহিত বিবাহ করেন এবং মহম্মদকে রাজ্যোচিত বৃত্তি দিয়া