পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

•ब्रवर्णे बांगानांबद्द्श्ांन brVNO হইয়াছিল। নিশ্চয়ই তিনি সুন্দরী স্ত্রীলোক খুজিয়া বেড়াইতেন, এ সম্বন্ধে তাহার পূর্ববৰ্ত্তী নবাব ওস্তাদ ছিলেন, তাহার রাজত্বকালে তিনি এইভারে বহু অপরাধ করিয়াছেন, কিন্তু সিরাজ ৪ মাস কালের মধ্যে এরূপ অপরাধ কতটাই বা করিতে পারিয়াছিলেন ? নাটোরের মহারাণী ভবানীর কন্যা তারাসুন্দরী রাজসাহী-বাজুরাগ্রামবাসী রঘুনাথ লাহিড়ীর পত্নী ছিলেন, তিনি নিরুপম সুন্দরী ছিলেন, তিনি বাল্যবিধবা । তাহার দিকে সিরাজের লোভ ছিল। এসম্বন্ধে দেশব্যাপী এত প্ৰবাদ আছে যে তাহা অবিশ্বাস করা চলে না। তারাসুন্দরীকে লইয়া রাণী ভবানী এতটা বিব্রত হইয়া পড়িয়াছিলেন যে, তাহার একটা মূৰ্ত্তি গড়িয়া তাহা শ্মশানে পোড়াইয়া র্তাহার মৃত্যু প্রচার করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। আদুরে ছেলে তঁাহার অভিভাবক গুরুজনের যত আদর পায় সেই পরিমাণে সে অপরাপর লোকের চক্ষুঃশূল হইয়া থাকে ! এই হিসাবে সিরাজ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব হইতেই লোকের বিষচক্ষে পড়িয়াছিলেন। অবশ্যই হুসেনকুলি ও তাহার ভ্রাতাকে হত্যা করিয়া বিনা শাস্তিতে ক্ষমা লাভ করাতে এবং পূজনীয় মাতামহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাতে অত্যধিক আদরে নষ্ট এই বালককে দেখিতে না পারার জন্য আমরা জনসাধারণকে দোষ দিতে পারি না । তিনি লোকশ্রদ্ধা এতটা হারাইয়াছিলেন। যে, তাহার নিষ্ঠুর মৃত্যু এবং তঁহার বিরুদ্ধে হেয় ষড়যন্ত্র-লোকে জানিলেও তঁহার স্মৃতি কোন কারুণ্যের সৃষ্টি করে নাই, এমন কি যে ফকির তিনদিনের উপবাসী নবাবকে খাবার দেওয়ার লোভে ডাকিয়া আনিয়া মীরজাফরের লোকের হাতে ধরাইয়া দিল, তাহার বিরুদ্ধে লোকে একটা কথাও বলিল না। কয়েক দিনের নিরন্তু উপবাসের পর ক্ষুধাতৃষ্ণাতুর হতভাগ্য নবাব যখন আহারে বসিবেন, তখন ধূত হইয়া হত্যার জন্য মীরজাফর-গৃহে নীত হইলেন। র্তাহার মৃত্যুর পর শব্ব হস্তিপৃষ্ঠে রাজপথে নীত হইলে তাহার মা আমনা বেগম আৰ্ত্তনাদ করিয়া সেই হস্তীর পদতলে পতিত হইলেন। যে প্ৰিয়দৰ্শন কিশোর তাহার দাদামহাশয়ের আদরের দুলাল ছিলেন, তাহার অনাহার-অনিদ্রা ক্লান্ত দেহের উপর নিৰ্ম্মম খড়গাঘাত ও রাজনন্দিনীর পরিতাপে বোধ হয় পাষাণও বিগলিত হুইত, কিন্তু তাহার এই করুণ শোচনীয় পরিণাম উপলক্ষে পল্লীকবিরা একটা ছড়া বা গীতিকা রচনা করিল না। পলাশীর বিস্তৃত প্ৰাঙ্গণে চাষার যেরূপভাবে হলচালনা করিত, সেইভাবেই কৃষি-কাৰ্য্য চলিল, কোন পানী-কবি এরূপ শোকাবহ ব্যাপার লইয়া একটি গান বঁধিল না, ইহার কারণ কি ? অথচ ইংরেজদের গুণগানে আকাশ-বাতাস পূর্ণ হইয়া গেল, চারিদিকে জয়জয়কার পড়িল-এই বিসদৃশ কাণ্ডের অর্থ কি ? নবাব জনমত অগ্ৰাহ করিয়া চলিয়াছেন—অত্যাচার করিয়াছেন— এবং প্ৰজারা এমন কি রাণী ভবানীর ন্যায় পুজনীয়া সম্রান্ত মহিলাও তাহার ভয়ে অনিদ্র নিশা যাপন করিয়াছেন। সেনবংশের রাজত্বনাশের পরেও তৎসম্বন্ধে পল্লীকবির নীরব ছিলেন, নিম্ন সম্প্রদায়ের শতসহস্ৰ লোকের গ্ৰীতি তাহারা আকর্ষণ করিতে পারেন নাই, শুধু ব্ৰাহ্মণসমাজ তাঁহাদের পক্ষপাতী ছিলেন। তাহারা বাঙ্গলা ভাষাকে ইতরের ভাষা বলিয়া অবজ্ঞা করিতেন, বাঙ্গলা ভাষায় শাস্ত্র প্রচার ও ইতৱশ্রেণীর সম্বন্ধে তারাসুন্দরী।