পাতা:বৃহৎ বঙ্গ (দ্বিতীয় খণ্ড) - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/২৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৃহৎ বঙ্গ وNN সম্বন্ধে তাহার একান্ত অন্তরঙ্গগণও প্ৰশংসাপত্র দিতে পরিবে না। সিয়ার মুতীক্ষরিনের লেখক গোলাম হুসেন স্বয়ং ইহার এক ওমরাহ ছিলেন, তঁাহার সঙ্গে সকৎজঙ্গের ব্যবহারের অনেক রহস্যজনক ঘটনা উক্ত পুস্তকে লিপিবদ্ধ আছে। পূৰ্ণিয়ার এই তরুণ নবাবের নাম-দস্তখতের মত বিদ্যাও ছিল না। সুতরাং গোলাম হুসেন তাহার আদেশমত যে সকল পত্রের মুসাবিদ করিতেন, তাহা তাঁহাকে বুঝাইতে যাইয়া অনেক বিভ্ৰাট উপস্থিত হইত। কোন অক্ষর কেমন করিয়া লিখিতে হইবে, কোথায় নোক্তা, কোথায় বক্ররেখা বা সরল রেখা দিতে হইবে, প্ৰতি পদে নবাবকে তাহ বলিয়া দিতে হইত। এইরূপ করিতে যাইয়া গোলাম হুসেন একদিন দেখিলেন, নবাব কলম ফেলিয়া দিয়া দূরে যাইয়া চুপ করিয়া বসিয়া রহিলেন। র্তাহার ওমরাহ। আর কি করেন, এক ঘণ্টা তিনিও চুপ করিয়া বসিয়া রহিলেন, তাহার কি অপরাধে নবাব বিরক্ত হইযাছেন ইহা তিনি বুঝিতে পারিলেন না। আর একদিন নবাব বলিলেন, “দেখ, তুমি আমার ওমরা, তুমি আমার মাষ্টার নও, তবে তুমি আমার লেখাপড়া লইয়া এত মাথা ঘামাও কেন ?” গোলাম হুসেন সতর্ক হইয়া গেলেন, ইহার কিছুদিন পরে সকৎজঙ্গ আবার ইহাকে সানুনয়ে অনুরোধ করিলেন, “তোমায় আমাকে কিছু লেখাপড়া শিখাইতে হইবে বৈকি ? আমন চুপ করিয়া থাকিলে চলিবে কেন ?” যুদ্ধকালে ওমর খা নামক এক মন্ত্রী তাহাকে সুপরামর্শ দিতে গিয়াছিলেন । তিনি বলিয়াছিলেন যে তিনি বহুবৎসর নিজামুলমুলুকের অধীনে কাজ করিয়া অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছেন এবং নবাব যে ভাবে সৈন্য পরিচালনা করিতেছেন, তাহা যুদ্ধরীতিসঙ্গত নহে। তখন নবাব নিজামুলমুলুককে গালাগালি দিয়া বলিলেন “আমি কোন উপদেশ শুনিতে চাহি না, আমি তিনশত যুদ্ধে দক্ষতা দেখাইয়াছি।” সিবাজউদ্দৌলা রাজা রাসবিহারীকে পূর্ণিয়ায় পাঠাইয়া দুইটি পরগনাসম্বন্ধে একটা ব্যবস্থা করিবার প্রস্তাব কবিয়াছিলেন । বঙ্গেশ্বর শুনিয়াছিলেন, মীরজাফর এবং অপর কয়েকজনের। প্ৰবৰ্ত্তনায় সকৎজঙ্গ তাহার অধীনত্ব অস্বীকার করিয়া অনেক রকম কাণ্ড করিতে উদেযাগ করিতেছেন। সিরাজের পত্ৰখানি খুব ভদ্রভাবে লিখিত হইলেও তাহার ভিতরে একটা রাজনৈতিক চাল ছিল। এই পত্রের উত্তর যাহা দিতে হইবে, গোলাম হুসেন সকৎজঙ্গের আদেশমত তাহার একটা খসড়া করিয়া রাজসভায় উপস্থিত করিলেন। এই খসড়াটায় খুব রাজনৈতিক জ্ঞানের পরিচয় ছিল ; স্পষ্ট জবাব বলিয়া কিছু ছিল না, কিন্তু নানা অছিলায় দেরী করিয়া সময় লইবার অভিসন্ধি ছিল। সিরাজউদ্দৌলা সেই গুপ্ত উদ্দেশ্য যাহাতে না বুঝিতে পারেন। সেইরূপ লিপিকৌশলের সঙ্গে মুসাবিদাটি করা হইয়াছিল, সকৎজঙ্গ উহা শুনিয়া খুবই খুশী হইলেন। কিন্তু যখন সভাসদেরা গােলাম হুসেনের চিঠির অতিরিক্ত মাত্রায় প্রশংসা করিতে লাগিলেন, তখন “ঋদ্ধিযুক্ত হি পুরুষা ন সহন্তে পরস্তবম”-নবাব নিতান্ত চটিয়া গেলেন। তিনি বলিলেন, “ইহার ( গোলাম হুসেনের )। অবশ্যই বুদ্ধিাশুদ্ধি আছে, কিন্তু তাই বলিয়া কি আমার বুদ্ধির সঙ্গে ইহার তুলনা হয় ? ইহার ঘটে যদি দশ হাজার লোকের বুদ্ধি থাকে, তবে আমার ঘটে লাখ লোকের বুদ্ধি আছে, আমি ইহার লেখাটা অনুমোদন করিব না।” সুতরাং তিনি অন্ত এক মন্ত্রীর বুদ্ধিতে সিরাজকে লিখিয়া পাঠাইলেন, “আমি দিলী